The Mirrow

তথাকথিত তৎসম শব্দের বানান সরলীকরণে আশু কর্তব্য

Share the Article

শান্তনু গঙ্গারিডি

[১] পঙক্তি ভোজ না ডাবল ডোজ় 😏

এমন এক সময় ছিল যখন হিন্দু বিবাহ অন্নপ্রাশন এমনকি শ্রাদ্ধাদিতেও পঙক্তি ভোজনের স্ট্রিক্ট নিয়মাবলী ছিল।

সর্ব প্রথম বিপ্রগণ অন্ন গ্রহণ করতেন। তারপর বৈদ্য কায়স্থ বৈশ্য চণ্ডাল ইত্যাদি। শেষোক্তরা এক সময়ে খাদ্য গ্রহণ করলেও আলাদা আলাদা পঙক্তিতে আসন নিতে হতো।

আমার এই লেখাটা অবশ্য সেই পঙক্তি ভোজন নিয়ে না। আমি বাংলা বানান সরলীকরণে বা সমতাবিধানে তৎসম এবং অতৎসম বিভাজন নিয়ে বলছি। তৎসম শব্দ বাদে বাকি শব্দগুলোর বানান সরলীকরণের কাজ ইতিমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। বাঙালির উচ্চারণের দীর্ঘ স্বর নেই বলে হ্রস্ব-করণ করা হয়েছে। 

অদ্ভুত ব্যাপার, যাঁরা এই কাজটা করেছেন তাঁরাই কিন্তু তৎসম শব্দগুলোতে হাত দিতে চাইছেন না। একে বারে নট নড়ন চড়ন নট কিচ্ছু! তৎসম শব্দ মানে অবিকৃত সংস্কৃত শব্দ। সেই তৎসম শব্দরাজি ভায়া পালি বাংলায় গৃহীত হয়ে বাঙালির নিজস্ব স্বরে উচ্চারিত হবার পরেও নাকি ঐ সকল তৎসম শব্দের চ্যাস্টিটি রক্ষার দায়িত্ব বাঙালিকে অনন্তকাল ধরে বহন করে যেতে হবে! অন্যান্য ম্লেচ্ছ যাবনিক শব্দের ছোঁয়া বাঁচাতে সংস্কৃত থেকে আসা তৎসম শব্দকে আলাদা পঙক্তিতে বন্দি করে রেখেছেন ওঁরা।

পবিত্র সরকার মহাশয় নিজের বই বাংলা বানান সংস্কার : সমস্যা ও সমাধান-এর দ্বিতীয় সংস্করণের ভূমিকায় লিখেছেন, “তবে পাঠকদের কাছে খোলাখুলি বলি, বানান যেমন একজন লোক সারাজীবন ধরে শেখে, তেমনই সারাজীবন ধরে সিদ্ধান্ত নেয় এ সম্বন্ধে। এ ভূমিকা লিখতে গিয়েই দেখছি, বই ছাপতে ছাপতে কিছু বানান সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত আমার বদলে গেছে। ‘খ্রিষ্ট’, ‘খ্রিষ্টাব্দ’ সুপারিশ করেছি বইয়ে, কিন্তু সমতার খাতিরে এখন ‘খ্রিস্ট’, খ্রিস্টাব্দ’-ই আমার কাছে গ্রহণযোগ্য মনে হচ্ছে। নিজের গোঁ নিয়ে একজায়গায় দাঁড়িয়ে থাকা উচিত নয়।” 

আমরা বিস্মিত হয়ে লক্ষ করি  পশ্চিমবঙ্গ বাংলা আকাদেমির বানান অভিধানে কৃষ্ণ কেষ্টঠাকুরই থেকে গেছেন। কেশ্ট ঠাকুর লিখে বাংলা বানানে সমতা বিধানের কোনো আলাপই সেখানে নেই। একেই বলে হিন্দু পুনরুত্থানবাদিদের গোঁ। বাংলা বৈয়াকরণিকদের এই সংস্কৃত ভক্তি শেষ হবার কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। সদর দপ্তরে কামান দাগতে হবে।

[২] মজাদার খেলা ভান্ডা-ফুট 😊

সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি শব্দ নিয়ে তুলকালাম চলছে। আনন্দবাজার পত্রিকা কিছু দিন থেকে “ভান্ডার” লিখছে। এই নিয়ে যাবতীয় সমস্যা। শব্দটা যদি তৎসম হয় তবে ভাণ্ডার হবে। না হলে ভান্ডার। 

বাংলাভাষার তাবড় তাবড় পণ্ডিতরা ঘণ্টার পর ঘণ্টা ধরে আলাপ আলোচনা করে / পুঁথিপত্র  ঘাঁটাঘাঁটি করেও নির্দিষ্ট সিদ্ধান্তে উপনীত হতে পারেননি।

ভাষাতত্ত্ববিদ পবিত্র সরকার লিখছেন:👇🏽 

“মুশকিল হল সুকুমার সেন প্রমুখেরা সংস্কৃত ভাণ্ডাগার থেকে এসেছে বলে নির্দেশ করেছেন।  তাই তদ্ভব ধরে আনন্দবাজার, এমনকি অন্যরাও ভান্ডার লেখে।  কিন্তু পরে দেখা গেছে যে, সংস্কৃত অভিধান মনিয়ের উইলিয়াম্সেও ‘ভাণ্ডার’  (মূর্ধন্য ণ-এ ড-এ) আছে। অর্থাৎ সংস্কৃতে দুটোই প্রাপ্য, দুটোই তৎসম।  কাজেই মূর্ধন্য ণ ড-ই চলা উচিত।”

আরো অনেক জ্ঞানীগুণীজন এই বিষয়টিতে নিজের নিজের মতামত দিয়ে চলেছেন। তবু কেউ তৎসম শব্দ নিয়ে এই অহেতুক মাথা ঘামানো থেকে বিরত থাকতে রাজি না। বাংলায় বিলুপ্ত এই সংস্কৃতমুখী মূর্ধন্য ণ রক্ষণাবক্ষেণের পুরো দ্বায়িত্বটা যে তাঁদের! 

প্রসঙ্গত মনে পড়ল। শীতের বনভোজনে এক ধরনের খেলা হয়। ভান্ডা-ফুট খেলা। কাপড় দিয়ে চোখ বেঁধে দেবার পর নির্দিষ্ট দূরত্বে রাখা একটি ভান্ডকে ডান্ডা দিয়ে ফাটিয়ে দিতে হয়। ভাণ্ড প্রকাণ্ড প্রচণ্ড ষণ্ড মুণ্ডু শব্দাবলীতে ণ রক্ষার জন্য তাঁদের এই ব্যাকুল প্রয়াস এই ভান্ডা ফাটানোর মজাদার খেলাকে মনে করিয়ে দিল। হাজার বছর আগে বাঙালি ণ-র প্রকৃত উচ্চারণ বিস্মৃত হয়েছে। বাঙালির জিহ্বা ও কণ্ঠে ণ ধ্বনি ন-র মতোই উচ্চারিত হয়। বাংলা বানানে ণ রাখার কোনো যুক্তিযুক্ত কারণ থাকতে পারে না। ভাণ্ডার শব্দ নিয়ে নিজেদের ভান্ডা-ফুট হয়ে যাবার পরেও বাঙালি পণ্ডিতবর্গ নিজেদের গর্ব ছাড়তে রাজি না।  কোমলমতি বাঙালি বিদ্যার্থীদের স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলার ফুরসত নেই। ওদের ঘাড়ে অনাবশ্যক মূর্ধন্য ণ চেপেই আছে।

একটু খেয়াল করে দেখুন। আলতা বা আলতো উচ্চারণ করার সময় আমরা যে ল বলি সেটা দন্ত্য-ল। আবার, উলটা শব্দটা বলার সময় জিভ কিছুটা উলটে যায় তাই না। দ্বিতীয় ল-টা মূর্ধন্য-ল। বিভিন্ন ভারতীয় ভাষায় মূর্ধন্য-ল রোজকার ভাষায় ব্যবহার করা হয়। যেমন, দেবনাগরী লিপিতে ळ রয়েছে যা মরাঠিভাষায় নিত্যসঙ্গী। তামিল এবং কন্নড় ভাষায়ও দীর্ঘ-ল রয়েছে। তামিল নামটির শেষ ল দীর্ঘ -ল। তাই বলছিলাম, বাংলায় একটা ল দিয়ে কাজ চালাতে বাধা না থাকলে একখানা ন দিয়েও কাজ চালানো সম্ভব।

[৩]  পিঁজরাপলে বন্দি বাংলা শব্দ 🙄

বাংলা একাডেমি-ঢাকা, পশ্চিমবঙ্গ বাংলা আকাদেমি এমনকি আনন্দবাজার পত্রিকা গোষ্ঠীও বাংলা বানান সংস্কারে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করে এসেছে। ইতিমধ্যেই দেশি বিদেশি শব্দগুলোর হ্রস্ব-করণের কাজ শেষ হয়েছে। পরিতাপের ব্যপার, অনেকটা এগিয়ে যাবার পর এই তিনটি প্রতিষ্ঠান হঠাৎ করে থমকে দাঁড়িয়ে পড়েছে। বাকি বানান সংস্কার করতে গিয়ে তাদের সংস্কারে লাগছে। এতদিনের মেনে আসা বিশ্বাস ও ভক্তিতে আঘাত করে কেউ আর মহাপাতক হতে চাইছেন না।

একগুচ্ছ বাংলা শব্দকে যুক্তি বুদ্ধিহীন ভাবে তৎসম বলে চিহ্নিত করে পিঁজরাপল বদ্ধ গোমাতার স্ট্যাটাস দিয়ে রেখে দিয়েছেন এঁরা। তাঁরা বেমালুম ভুলে গেছেন যে আমাদের মাতৃভাষা সংস্কৃত ভাষা থেকে আসেনি। বাংলা ভাষার সৃষ্টি হয়েছে প্রাকৃত পালি থেকে। বাঙালির শব্দ উচ্চারণ পালি প্রভাবিত। সংস্কৃতভাষা আমাদের বাংলাভাষার অতি অতি অতি বৃদ্ধ প্রমাতামহী বা প্রপিতামহীও না। দুঃখের কথা হল আমাদের বৈয়াকরণিকেরা এবং অভিধান রচনাকারেরা সেই পালি সংযোগকে সম্পূর্ণ রূপে ভুলিয়ে দিয়ে প্রতিটি বঙ্গজ শব্দের মূল খুঁজতে গিয়ে গোবলয়ে উপস্থিত হয়েছিলেন। সেটার খেসারত বাঙালি দিয়ে চলেছে। বাংলা ব্যাকরণ তৈরি হলেও কার্যত সেটা সংস্কৃত ব্যাকরণই রয়ে গেছে।

এই মুহূর্তে বাঙালি ভাষাতত্ত্ববিদরা তৎসম শব্দের হ্রস্ব-করণ করার বিপক্ষে  অনড় অবস্থান নিয়েছেন। বাংলা ভাষাকে আধুনিক ভাষা, সহজ বোধ্য সরল ভাষায় পরিণত হওয়া থেকে বিরত রাখার কাজে এঁদের ক্লান্তি নেই। আগে পাখী লেখা হতো। এখন পাখি লেখা হয়। কারণ, বাঙালি দীর্ঘ স্বর উচ্চারণ করে না। যে পণ্ডিতরা এই কথাটা বলেন তাঁরাই পর মুহূর্তে পাল্টি খেয়ে বলে উঠেন: “পক্ষী লিখিতে হইবে কারণ উহা তৎসম শব্দ”। হাতি ঠিক কিন্তু হস্তীর দীর্ঘমেদ কমাতে রাজি হচ্ছেন না। যে বাঙালি ছেলেটির নাম উজ্জ্বল সে নিজেদের নাম উচ্চারণ করে উজ্-জল। কিন্তু তাকে নাকি উজ্জ্বল লিখতেই হবে। হিন্দিওলারা শব্দটাকে উজ্ওল উচ্চারণ করে। সংস্কৃতেও তাই। 

আরেকটি শব্দ উচ্ছ্বাস। ব-ফলাটা অণুবীক্ষণ যন্ত্র দিয়ে দেখতে হয়। বাঙালি উচ্-ছাশ বলে। সংস্কৃতে উচ্ছ্-ওয়াস। তবু আমাদেরকে নাকি সংস্কৃত বানানটাই লিখতে হবে। উচ্ছ্বাস শব্দের বানান নিয়ে আনন্দবাজার পত্রিকা ব্যবহার বিধির বই “বাংলা কী লিখবেন কেন লিখবেন”-এ লেখা আছে: “ব-ফলার কথা মনে রাখুন। ওটা বাদ না যায়। কাগজে মাঝে মাঝে ‘উচ্ছাস’ দেখা যায় তাই সতর্ক থাকা দরকার।” উজ্জ্বল বানান নিয়ে লেখা হয়েছে: “ব-ফলা এক্ষেত্রে জরুরি। কলকাতার একটি সিনেমা হলের নামের বানানে ব-ফলা নেই, কাগজে কিন্তু থাকাই চাই।”

বুঝুন, কতটা অন্ধ হলে এবং চরম সংস্কৃত ভক্তি থাকলে এরকম যুক্তিহীন বিধি রচনা সম্ভব। বাঙালি তো অন্তঃস্থ ব লিপিটাই গিলে ফেলেছে। জিহ্বা আহ্বান ইত্যাদি দু চারটা শব্দ ছাড়া বাঙালির কথায় অন্তঃস্থ ব উচ্চারণ নেই। আমাদের ভাষাতত্ত্ববিদেরা তবু জেদ ছাড়তে রাজি না।

বৌদ্ধধর্ম ও পালিভাষার সরাসরি প্রভাবে আমাদের ভাষা ও উচ্চারণ রীতি গড়ে উঠেছিল। শক্ত ভিতের উপরেই দাঁড়িয়ে ছিল। পরবর্তী কালে ব্রাহ্মণ্য ধর্মের উত্থানের পর উচ্চবর্ণের জ্ঞানীগুণিরা মাটির কাছাকাছি থাকা বাংলা ভাষার সংস্কারের মহান দ্বায়িত্বটা নিজেদের কাঁধে তুলে নিয়েছিলেন। এঁরাই পালিকে নির্বাসনে পাঠিয়ে বাংলা বানানকে সংস্কৃত অনুসারী করে তোলেন। তবে এটাও লক্ষ্যণীয় যে এত কাঠখড় পুড়িয়েও এঁরা বাঙালির মুখের জবান বদলাতে পারেননি। উচ্চারণ পরিবর্তন করতে পারেননি। 

আপামর বাঙালিকে তৎসম নামক এক অদ্ভুত অযৌক্তিক অযোনিসম্ভূত কৃত্রিম বানানের শৃঙ্খলে শৃঙ্খলিত করে রেখেছেন এই সব পণ্ডিতেরা। ইতিহাসের পাতা ওল্টালে আমরা দেখতে পাই ১৮৭৮ সালে শ্যামাচরণ গঙ্গোপাধ্যায় লিখছেন, বাংলা শব্দে দীর্ঘ স্বর নেই। মূর্ধন্য ণ নেই, য নেই, ম-ফলা য-ফলা ব-ফলা একেবারেই সংস্কৃতের মতো উচ্চারিত হয় না। তিনিও অবশ্য দীর্ঘ দিনের সংস্কার ত্যাগ না করে “তৎসম শব্দগুলো যেমন লেখা হচ্ছে তেমন হোক” বলেছিলেন। সেই সঙ্গে এটাও বলেছিলেন যে “বাকি শব্দে আমরা বাংলার উচ্চারণ প্রকৃতি মেনে বানান লিখব”।

১৮৭৮ থেকে ২০২১, মানে ১৪৩ বছর। সেদিনের অবস্থানেই থেকে গিয়ে তৎসম ব্যতিরেকে বাকি শব্দের বানান সংস্কার করেছেন আজকের সংস্কারকেরা। তথাকথিত তৎসম শব্দের বানান সরলীকরণ নিয়ে এক চুল এগিয়ে যাবার কথা ভাবতে পারছেন না বাঙালি ভাষাবিদরা।

পূর্ব পাকিস্তানে চলে যাবার পর মুহম্মদ শহীদুল্লাহ “শোজা বাঙলা”-র কথা চিন্তা করতে পেরেছিলেন। প্রস্তাব রেখেছিলেন, যদিও বাস্তবায়িত হয়নি।  আজকের পণ্ডিতেরা তৎসম শব্দের রক্ষাকর্তা সেজে চোখ ঢাকা কলুর বলদের মতো একই বৃত্তে ঘুরপাক খেয়ে যাচ্ছেন।

বাঙালি ছাত্রছাত্রীদের ওপর এক ধরনের মানসিক নির্যাতন চলছে। বাংলাভাষায় ব্যবহার করা সব শব্দ বাংলা শব্দ –এই ভাবনা থেকে সকল উৎস্যজাত শব্দের বানানে একই বিধি তৈরি করে সমতা বিধান করাই আশু লক্ষ্য হওয়া উচিত। সজনীকান্ত দাস লিখেছেন, “সাহেবরা সুবিধা পাইলেই আরবী-পারসীর বিরোধিতা করিয়া বাংলা ও সংস্কৃতকে প্রাধান্য দিতেন, ফলে দশ পনের বৎসরের মধ্যেই বাংলা গদ্যের আকৃতি ও প্রকৃতি সম্পূর্ণ পরিবর্তিত হইয়াছিল।” 

সংস্কৃত কলেজে বাইশ বছর পড়িয়েছেন জয়গোপাল তর্কালঙ্কার। তিনি পারসীক অভিধান লিখে তাতে ২৫০০ যাবনিক বা ফার্সী শব্দের জায়গায় সংস্কৃত শব্দ যোগ করে মহান কাজ ছিলেন! এরপর তাঁর হাতে তৈরি হল ‘বঙ্গাভিধান’। তিনি খোলাখুলি ঘোষণা দিলেন, “ইহাও উচিত হয় যে সাধুলোক সাধুভাষা দ্বারাই সাধুতা প্রকাশ করেন। অসাধুভাষা ব্যবহার করিয়া অসাধুর ন্যায় হাস্যাস্পদ না হয়েন।”  শুধু জয়গোপাল না। এই ভাষাশুদ্ধি মিশনে আমাদের প্রাতঃস্মরণীয় প্রায় সকল পণ্ডিতবর্গ নিজের নিজের কন্ট্রিবিশন রেখেছিলেন।

কৃত্তিবাস ওঝা কাশীরাম দাশ সৈয়দ আলাওল রামপ্রসাদ সেন ভারতচন্দ্ররা যে সাহিত্য রচনা করে গেছেন তাতে সংস্কৃত এবং অসংস্কৃত বা যাবনিক শব্দ বলে কোনও বিভাজন ছিল না। সব ছিল বাঙালির বাংলা শব্দ। এত ঐতিহ্য থাকার পরেও একটা সময়ে এসে বর্ণহিন্দু পণ্ডিতদের হাতে পড়ে বাংলাভাষার শুদ্ধিকরণ হয়ে গেল। চিরদিনের বাংলা শব্দের এক বিরাট অংশকে তৎসম বানিয়ে বানান বদলে দেয়া হল।

এর ফলে বাঙালির পাঠ্যপুস্তক এমন ঘরাণায় তৈরি হোল যে মুহম্মদ শহিদুল্লাকে আফশোস করতে হচ্ছে, “আমাদের শিশুগণকে প্রথম হইতেই রাম শ্যাম গোপালের গল্প পড়িতে হয়। সে পড়ে গোপাল বড় ভাল ছেলে। কাসেম বা আবদুল্লা কেমন ছেলে, সে তাহা পড়িতে পায় না। এখান হইতেই সর্বনাশের বীজ বপিত হয়। তারপর সে পাঠ্যপুস্তকে —- হিন্দু মহাজনদিগের আখ্যানই পড়িতে থাকে। স্বভাবতঃ তাহার ধারণা জন্মিয়া যায়, আমরা মুসলমান ছোট জাতি, আমাদের মধ্যে বড় লোক নাই। এই সকল পুস্তক দ্বারা তাহাকে জাতীয়ত্ববিহীন করা হয়। হিন্দু বালকগণ ঐ সকল পুস্তক পড়িয়া মনে করে , আমাদের অপেক্ষা বড় কেহ নয়। মোসলমানেরা নিতান্ত ছোট জাত। তাহাদের মধ্যে ভাল লোক জন্মিতে পারে না। এই প্রকারে রাষ্ট্রীয় একতার মূলোচ্ছেদ করা হয়।”

[৪] কি করিতে হইবে🤔

১৭৭৮ সালে ন্যাথানিয়েল ব্রাসি হ্যালহেড সাহেব আ গ্রামার অফ বেঙ্গল ল্যাঙ্গুয়েজ নামে যে বইটি প্রকাশ করে ছিলেন সেখানে যথা সম্ভব প্রতিটি বাংলা শব্দের সংস্কৃত উৎস খুঁজে বের করা হয়েছিল। পরবর্তী কালপর্বে বাঙালি পণ্ডিতবর্গ সেই গ্রন্থটিকেই আকর গ্রন্থ ধরে নিয়ে আঁকড়ে বসেছিলেন এবং এখনো বসে আছেন।

শ্রীজ্ঞানেন্দ্রমোহন দাস মহাশয়ের অভিধানের একটি সংস্করণের মুখবন্ধ লিখতে গিয়ে সুবোধচন্দ্র সেনগুপ্ত বলেছেন: “হলহেড ১৮৭৮ খৃষ্টাব্দে যে প্রথম বাংলা ব্যাকরণ লিখেন তাহা সংস্কৃত ব্যাকরণেরই অনুগামী। বাংলা ভাষা যে সংস্কৃত ভাষা হইতে উদ্ভূত তাহা মানিয়া লইলেও ইহার নিজস্ব বৈশিষ্ট্য আছে, নিজস্ব শব্দগঠন প্রণালী আছে, ইহার মধ্যে বহু দেশজ শব্দ প্রবেশ করিয়াছে, বিদেশী ও অন্য দেশী ভাষা হইতে ইহা বহু শব্দ গ্রহণ করিয়াছে ও করিতেছে। সংস্কৃত হইতে যে সকল শব্দ ইহা গ্রহণ করিয়াছে তাহাদের অর্থেও নিজস্ব মোড় দিয়া দিয়াছে। কিন্তু ঊনবিংশ শতাব্দী ও বিংশ শতাব্দীর প্রথম দিকে শিক্ষাক্ষেত্রে বাংলা সংস্কৃতেরই অধীন ছিল। উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে কলেজে বাংলা পড়াইতেন সংস্কৃতের অধ্যাপকেরা এবং স্কুলে সংস্কৃত পড়াইতেন হেডপণ্ডিত আর বাংলা পড়াইতেন তাঁহারই অনুগামী সেকেণ্ড-পণ্ডিত। খাটি বাংলা ব্যাকরণ ও খাটি বাংলা অভিধান রচনার ভার যাহাদের উপরে পড়ে তাঁহারা এই কাজের জন্য কোন দিক্‌ দিয়াই প্রস্তুত ছিলেন না।” [৩১ অক্টোবর ১৯৭৮]

বাঙালি মাত্রেই আত্তা বলি। পশ্চিমবঙ্গীয়রা আঁত্তা উচ্চারণ করেন। আত্তা শব্দটা পালি থেকে বাংলায় এসেছে এবং বাংলার পলিমাটির মানুষের মুখেও আত্তা উচ্চারণ মান্যতা পেয়েছে। কিন্তু আত্তাকে আত্তা বানানে লিখলে আমাদের জ্ঞানীগুণিজনদের আত্তারাম খাঁচাছাড়া হয়ে যায়। আত্তঘাতী বাঙালির ছেলেপুলেদের তাই একই শব্দের দুই ধরনের উচ্চারণ শিখে নিতে হয়। পাড়ার বিশ্বাসবাবু নিজেকে বিশ্শাশ বলে পরিচয় দিয়ে থাকেন। হাফ সাহেব বা হিন্দিওলাদের কাছাকাছি এলে এই ব্যক্তিই মিস্টার বিশওয়াস হয়ে যান। সাধে কী আর আজকালকার ছেলেমেয়েদের মুখে শুধু মহাৎমা গান্ধী শোনা যায়। মহাত্তা উচ্চারণ উঠে যাচ্ছে। তৎসম বানানের বিশুদ্ধতা রক্ষা করতে গিয়ে বাঙালির নতুন প্রজন্মের ভাষা হিন্দি হিন্দি হয়ে যাচ্ছে। বাংলা ভাষা শিক্ষার আড়ালে কোমলমতি বিদ্যার্থীদের দ্বিচারিতা শেখানোর এই জড়ভরত পদ্ধতির অবসান না হলে বাঙালির বিপন্ন অস্তিত্ব বিপন্নই থাকবে।

হাত হাতি মাথা পাতা পাথর ছাতা তামা শব্দগুলো সরাসরি পালি হত্থ হত্থি মত্থ পত্ত পত্থর ছত্ত তাম্মা থেকে এসেছে। কিন্তু ব্রাহ্মণ্যবাদি / বর্ণবাদি ভাষাবিদরা বলবেন, ওগুলো যথাক্রমে সংস্কৃত হস্ত হস্তী মস্তক পত্র প্রস্তর ছত্র এবং তাম্র থেকে এসেছে। এদের পাল্লায় পড়ে ছাত্রদের শিখতে হয় উচ্ছ্বাস উজ্জ্বল। গণ্ড থেকে গণ্ডুষ। গন্ডা গন্ডার গান্ডেপিন্ডে ঘণ্টা ঘণ্টী কিন্তু ঘুন্টি ঘূর্ণি ঘৃণা ঘ্রাণ চরণ। যাকে বলে চরম অব্যবস্থা ও চরম বিপর্যয়।

সংস্কৃতের ধামাধরা বাঙালি পণ্ডিতবর্গের ক্রিয়াকলাপ শ্রীজ্ঞানেন্দ্রমোহন দাসের নজর এড়িয়ে যায়নি। তাই নিজের অভিধানের ২য় সংস্করণের ভূমিকায় লিখছেন, “তখন খাটি বাঙ্গালাভাষার নাম ছিল সংস্কৃত হইতে ভ্রষ্ট–“অপভাষা” “অপভ্ৰষ্টভাষা” বা “ইতরভাষা”। কিন্তু তখনকার পণ্ডিতসমাজ-নিন্দিত অবজ্ঞাত এই অপভাষাই ছিল আমাদের প্রাণসঞ্চারিণী বাঙ্গালা ভাষা। অপভাষায় তখন গ্রন্থ লিখিবার দুঃসাহস যাঁহারা রাখিতেন, তাঁহারা সংস্কৃতজ্ঞ পণ্ডিতমণ্ডলীর দিকে চাহিয়া যেন কোন অজ্ঞাত অপরাধের জন্য মার্জনা ভিক্ষা করিয়া অতীব সঙ্কোচে, অতি ভয়ে ভয়ে কলম ধরিতেন। তখন Phonetic spelling অর্থাৎ উচ্চারণগত বানানই এখনকার অপেক্ষা অধিক প্রশস্ত ছিল এবং তাহা প্রাদেশিক বৈভিন্ন প্রভাবে নানা রূপান্তর গ্রহণ করিয়াছিল। কিন্তু এই বৈচিত্রময় ভাষাই ছিল প্রাচীন বাঙ্গালীর প্রধানতঃ কথ্য এবং অংশতঃ সংস্কৃতানভিজ্ঞদের লেখ্য ভাষা। এই ভাষায় যাহারা প্রথম প্রথম বাঙ্গালা ব্যাকরণ ও অভিধান প্রণয়নের প্রয়োজন বোধ করিয়াছিলেন তাহাদের পূর্ব্বতম পথ-প্রদর্শক ছিলেন জনৈক পর্তুগীজ পাদরী মানুএল-দা-আসস্সুষ্পসাঁউ। তাঁহার বাঙ্গালা ব্যাকরণ এবং বাঙ্গালা পর্তুগীজ ও পর্তুগীজ বাঙ্গালা শব্দকোষ রোমান অক্ষরে মুদ্রিত হইয়াছিল। পরে ইষ্ট ইণ্ডিয়া কোম্পানীর সিভিল ( অসামরিক) কর্মচারী নাদেনিএল ব্রাসী হলহেড্ সাহেব ১৭৭৮ খ্রীষ্টাব্দে বঙ্গাক্ষরে একখানি বাঙ্গালা ব্যাকরণ লেখেন এবং তাহারই সমসাময়িক যুগপ্রবর্ত্তক মহাত্মা রাজা রামমোহন রায় তাহার “গৌড়ীয় ব্যাকরণ” লিখিয়া এই অভাব দূর করিতে মনস্থ করিয়াছিলেন। কিন্তু সংস্কৃতজ্ঞ পণ্ডিতমণ্ডলীর প্রভাবে এবং তৎকালীন লেখক ও পাঠক সাধারণের উৎসাহ ও সহানুভূতি অভাবে, সংস্কৃত-ব্যাকরণের সূত্রানুশাসনবর্জিত বাঙ্গালা ব্যাকরণগুলি ভাষার ইতিহাসগর্ভে আত্মগোপন করিয়া রহিল এবং সংস্কৃত ব্যাকরণের বঙ্গানুবাদ ও তাহারই ছাঁচে ঢালা বঙ্গাক্ষরে ও বঙ্গভাষায় লিখিত সংস্কৃত ব্যাকরণই প্রবল থাকিয়া বাঙ্গালা লেখ্যভাষাকে নিয়ন্ত্রিত করিতে লাগিল। ব্যাকরণের মতই বাঙ্গালা অভিধানগুলি সংস্কৃত কোষের বঙ্গানুবাদ অথবা প্রকৃতপক্ষে সংস্কৃত-বাঙ্গালা অভিধানে পরিণত হইল।” [৩০ ডিসেম্বর ১৯৩৭]

আমরা স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি “তখন Phonetic spelling অর্থাৎ উচ্চারণগত বানানই এখনকার অপেক্ষা অধিক প্রশস্ত ছিল এবং তাহা প্রাদেশিক বৈভিন্ন প্রভাবে নানা রূপান্তর গ্রহণ করিয়াছিল।” মানে তখন বাংলা বানান বাঙালির উচ্চারণে লেখার চল ছিল কিন্তু এক সময় সেটা উঠিয়ে দেয়া হয়েছিল। এত বড় সত্য জানার পরেও আমরা এই ২০২১ সালে এসে বাংলা শব্দগুলোকে “যাবনিক”  “বৈদেশিক”  “দেশজ”  “তৎসম” নামে ভাগ বাটোয়ারা করে পৃথক পৃথক বানান স্থির করব? এই অনাচার আর চলতে পারে না। সময় সমাসন্ন। তৎসম শব্দকে পিঞ্জিরা মুক্ত করে যথা সম্ভব মুখের কাছাকাছি করা হোক। 

বিগত যুগের অভিধান প্রণেতারা যে বানান লিখে গিয়েছেন আজকের সময়ে দাঁড়িয়ে সেটাই মেনে চলার মধ্যে কোনো সার্থকতা নেই।  বাংলার অনেকগুলো ব্যঞ্জন বর্ণের মধ্যে দুটি ব্যঞ্জন মূর্ধন্য-ণ ও দন্ত-ন। সংখ্যায় দুই হলেও এই দুটো বর্ণকে বাঙালিরা কাছাকাছি উচ্চারণ করে থাকেন। হাজার বছর হল বাঙালিরা ণ-র সংস্কৃত উচ্চারণ বিস্মৃত হয়েছেন। অন্যদিকে, হিন্দি মরাঠি গুজরাতি ওড়িয়া ইত্যাদি আধুনিক ইন্ডিক ভাষায় ণ-র সংস্কৃত মূলানুগ ধ্বনি রক্ষিত আছে। ণ অনেকটা ড়ঁ-এর মতো উচ্চারিত হয়ে থাকে। কান পেতে শুনলে বুঝতে পাবেন গণেশ আকাশবাণী শব্দ দুটো ওরা গড়েঁশ আকাশবাড়ীঁ উচ্চারণ করে। কিন্তু, বাঙালি কোন অবস্থাতেই ণ উচ্চারণ ড়ঁ করে না। তাহলে আর কত দিন মূর্ধ্যণ ণ-র এই অনাবশ্যক বোঝা বাংলার বিদ্যার্থীদের বয়ে বেড়াতে হবে? বাংলা বানান এবং বাংলা ব্যাকরণ কবে সংস্কৃতর শৃঙ্খল ছিন্ন করে স্বাবলম্বী হবে?

তথাকথিত বিদেশি শব্দের হ্রস্ব-করণ হয়েছে কিন্তু তৎসম শব্দের বানান পরিবর্তনে কোনো ভাবেই সায় দেয়া হচ্ছে না। এই ব্রাহ্মণ্যবাদের অবসান ঘটিয়ে সহজ সরল বাংলা বানান বিধি চালু করা হোক। বাংলা ভাষা আত্মনির্ভর হোক না।

অভিধান সংস্কার বানান সরলীকরণ যুগের দাবি। স্বয়ং শেক্সপিয়ারের লেখা সংশোধন করে পড়া হচ্ছে। ইংরেজি অভিধান নিয়মিত সংশোধন করা হয়। বাংলা একটি আধুনিক ভাষা। জীবনীশক্তিতে ভরপুর আমাদের এই মাতৃভাষারও সময়ানুগ ঘষামাজা প্রয়োজন। সংস্কৃত নামক একটি ভাষার রক্ষণাবক্ষেণ করাটা আমাদের কাজ না। তাই প্রস্তাব রাখছি। প্রথম চোটে ণ-কে বাদ দেওয়া হোক। উজ্জ্বল উচ্ছ্বাস থেকে অনাবশ্যক ব-ফলাকে চিরমুক্তি দেওয়া হোক। ব্যঞ্জন বর্ণমালায় ণ থাকলে থাক। পণ্ডিতদের কাজে লাগবে। জেনে রাখা ভাল হিন্দিভাষিরা তৎসম শব্দ সংস্কৃত নিয়ম মেনেই লিখে থাকেন। তারাও কিন্তু काण्ड प्रचण्ड षण्ड বানানকে ছাত্রদের স্বার্থে সরলীকরণ করে कांड प्रचंड षंड লিখছেন। বাংলা স্বরবর্ণের সারিতে অ্যা-কে যাকে বলে অফিসিয়াল স্থান দিতে হবে। অ্যা উচ্চারিত শব্দাবলি এক একলা কেন কেমন যেন যেমন খেলা গেল গেছে দেখা ইত্যাদির বানানে এ-কার বাদ দিয়ে অ্যা-কার আসুক। ও উচ্চারণ করা হয় এমন শব্দে ও-কার লাগিয়ে দিলে আমার মতো বাঙালের প্রমিত বাংলা উচ্চারণ শিখে নিতে সুবিধে হবে।

14 thoughts on “তথাকথিত তৎসম শব্দের বানান সরলীকরণে আশু কর্তব্য”

    1. শান্তনু গঙ্গারিডি

      ধন্যবাদ।
      এখন পর্যন্ত শুধু মাত্র একজন বাংলা ভাষা শিক্ষকের সমর্থন পেয়েছি।

  1. পুলক তরফদার

    পালি ভাষাটি ও সংস্কৃত থেকেই এসেছে। যাই হোক, সংস্কৃতমূলকে কুঠারাঘাত করার চেষ্টাটা ঠিক মনে হল না।
    ভাষা নিজের গতিতে চলবে। জোর করে পরিবর্তন চাপিয়ে দিলে সেটার ফল ভালো না ও হতে পারে।

    1. শান্তনু গঙ্গারিডি

      বাংলাভাষা তো নিজের গতিতে চলেছিল। বাংলা বানান উচ্চারণের কাছাকাছি ছিল।
      পালি থেকে আসা আত্তাকে আত্মা বানিয়েই গোলমাল সৃষ্টি করা হয়েছিল।

    2. সংস্কৃত কোন জনপদের মানুষের মুখে উচ্চারিত ভাষা নয়।

  2. কিন্তু দীর্ঘদিন থেকে বাংলা অভিধান ছাপা হচ্ছে না। বোধহয় ভাষাবিজ্ঞানীরা মুখ্যমন্ত্রীর নেক নজরে নেই, আর তাঁর আশেপাশে বিচরণশীল ব্যক্তিদের দিয়ে অভিধানের কাজ করিয়ে নেওয়াও অসম্ভব। কারণ, এগুলোকে যে সম্পাদনা — সংশোধন, সংযোজন ইত্যাদি করতে হয়। পশ্চিমবঙ্গ বাংলা আকাদেমি তো একারণেই অর্ধমৃত। চলন্তিকার কিছু ফটোকপি করা পাইরেটেড সংস্করণ এখনও বাজারে খোঁজ করলে পাওয়া যাবে। অভিধানের অভাবে বাংলা ভাষাচর্চার নাভিশ্বাস উঠেছে। বানান অভিধান, বিদ্যার্থী অভিধান বোধ হয় শেষ। নতুন কিছু করার পরিবেশ এ বাংলায় নেই, বাংলার অন্যভুবন অর্থাৎ বরাক উপত্যকায় দুটো আঞ্চলিক অভিধান হলেও সার্বিক ভাবে ভাষাতত্ত্ব চর্চার অনুকূল পরিস্থিতি এখন নেই, বাঙালি জাতিসত্তার ভিত্তির উপর ই এখন এসেছে প্রবল আঘাত। এবং বাংলাদেশের অভিধান এদেশে সহজলভ্য নয়। উচ্চশিক্ষার এমনকী প্রাগ্রসর গবেষণার জন্য প্রয়োজনীয় অভিধানের যোগান নেই। এ আরেক বিপন্ন বিস্ময়।

  3. দিনেশরত্ন প্রভাকর

    দারূণ লিখেছেন! ❤️
    এই আন্দোলন বেগবান হোক। বাঙলা বানান তার নিজ দিশা ফিরে পাক সেই প্রত্যাশা করি।

  4. শান্তনু গঙ্গারিডি

    অনেকেই মন্তব্য করেছেন। আরো বহু লোক বিভিন্ন গ্রুপে কমেন্ট করেছেন। এঁদের সকলকে ধন্যবাদ।
    এই সূত্রে আমি আরো দীর্ঘ মতামত দিয়েছি। সেগুলো এখানে দেবার চেষ্টা করেও পারলাম না। কারণ, এখানে কপি-পেস্ট করা যাচ্ছে না।
    সেই দীর্ঘ দুটো উত্তর আবার এখানে টাইপ করার মতো ধৈর্য নেই।
    এডমিনরা বিষয়টা দেখুন। দয়া করে Copy paste enabled করে দিন।

  5. দিলীপকান্তি লস্কর। ldilipkanti@gmail.com

    পলি সংস্কৃত থেকে এলেই বা কি যায় আসে, সংস্কৃত কোন মানুষ বা মুনি-ঋষির মুখের ভাষা নয়। যদি কথাটি সত্যি হয়ে থাকে তবে বর্তমান সময়ের বাঙালিদের লেখ্যভাষায় উচ্চারণ মাফিক সহজতার উপর ভিত্তি করে বানানবিধিকে সরল করে নিতে কার কলজে ছিঁড়ে পড়ে যায় রে বাবা যে এ নিয়ে এতো জল ঘোলা না করলেই নয়! বাংলাভাষাকে ব্যবহারিক প্রয়োজনে সহজ করে তুলে নিয়ে সুনির্দিষ্ট নিয়মে বেঁধে নিলে কার কি ক্ষতি!
    বানান যত বেশি উচ্চারণনির্দৃষ্ট হয় ততই নির্ভুল হতে পারে। বানানবিধি যেন সহজ হয়ে সবার আয়ত্তে আসতে পারে। সেটাই লক্ষ্য হোক।

  6. এই লেখায় কিছু কিছু বিচ্যুতি রয়েছে সংস্কৃত শব্দ পালি ভাষার মধ্যে দিয়ে পরিবর্তিত হয়ে বাংলায় আসেনি, এসেছে প্রাকৃত ভাষার মধ্যে দিয়ে।দুটি ভাষাই মধ্যভারতীয় আর্যভাষা হলেও দুটি এক নয়।আরেকটি বিচ্যুতি কেষ্ট শব্দের উচ্চারণ- অনুগ বর্ণবিন্যাস কেশ্ট নয় কেস্ট হওয়া উচিত। এক্ষেত্রে সূত্রটি হল – বিযুক্ত সকল স, ষ বাংলায় শ উচ্চারিত হয়,আর সংযুক্ত ষ,শ বাংলায় স উচ্চারিত হয়। প্রশ্ন শব্দটির উচ্চারণ আদতে প্রস্ন।তাছাড়া এই লেখায় বানানের সমতা নেই একদিকে লিখছেন দেশি, বিদেশি আবার লিখছেন নিয়মাবলী ইত্যাদি।

Leave a Reply to Subhajit patra Cancel Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!