The Mirrow

সমাজ-সংস্কারক বিদ‍্যাসাগর আজও প্রাসঙ্গিক

Share the Article

যশোবন্ত রায়

বাংলার নবজাগরণের প্রাণপুরুষ তথা বর্ণপরিচয়ের জনক ঈশ্বরচন্দ্র বিদ‍্যাসাগরের আজ জন্মদিন। এই মহান পুরুষের জন্মদিনে তাঁর প্রতি আমার এই সামান্য শ্রদ্ধার্ঘ্য।

ভারতবর্ষের মাটিতে যে কজন মনীষী জন্মেছেন তাঁদের মধ্যে ঈশ্বর চন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায় একজন অন্যতম ব্যক্তিত্ব। তিনি ছিলেন বর্ণপরিচয়ের জনক। যার হাত ধরে আমাদের শিক্ষা শুরু।

১৮২০ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর তিনি বীরাসিংহ গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। বাবা ঠাকুরদাস বন্দ্যোপাধ্যায় এবং মা ভগবতী দেবী।

ছোটবেলা থেকেই ঈশ্বরচন্দ্র অত্যন্ত প্রখর বুদ্ধিসম্পন্ন ও মেধাবী ছিলেন। নিজের শিক্ষা গ্রহণের সাথে সাথে তিনি সমাজ সংস্কার নিয়ে ভাবনা চিন্তা শুরু করেন কিশোর বয়স থেকেই আর এর ফলস্বরূপ পরবর্তীতে  আমরা তাঁকে নারী মুক্তির একজন অন্যতম সংস্কারক হিসাবে পাই। ভারতবর্ষের মাটিতে নারী শিক্ষা ছাড়া যে উন্নতি সম্ভব নয় তা তিনি মর্মে মর্মে উপলদ্ধি করেছিলেন। বিদ‍্যাসাগরই কলকাতায় প্রথম মেয়েদের স্কুল শুরু করেন। যার নাম হিন্দু বালিকা বিদ্যালয় এবং বর্তমান নাম বেথুন স্কুল।

বিদ্যাসাগর সারাজীবন ধরেই সমাজের বহুমুখী সংস্কারে ব্রতী ছিলেন। কুসংস্কার ও বিভিন্ন নিয়মকানুনের বেড়াজালে আবদ্ধ হিন্দুসমাজের নারীদের সার্বিক উন্নয়নের জন্য তাঁর প্রচেষ্টা ছিল অবিস্মরণীয়। বহুবিবাহ ও বাল্যবিবাহের বিরোধিতা, বিধবাবিবাহের পক্ষে আন্দোলন, নারীশিক্ষার বিস্তার, উচ্চশিক্ষার প্রসার, সর্বোপরি জাতিভেদ, অস্পৃশ্যতা সহ বিভিন্ন সামাজিক কুপ্রথার বিরুদ্ধেও তিনি লড়াই চালিয়ে গেছেন।   

সমাজ সংস্কারক রূপে বিদ্যাসাগর যে সকল ক্ষেত্রেই সফলতা পেয়েছিলেন তা নয়, তবুও মৃত্যুর আগে পর্যন্ত তিনি সমাজ সংস্কারে নিবেদিতপ্রাণ ছিলেন। মহাদেব গোবিন্দ রাণাডে বিদ্যাসাগরের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে বলেছেন, ‘গবেষণা ও মৌলিকত্ব এবং জীবনের শ্রেষ্ঠ সময় ও শ্রেষ্ঠ সম্পদ দিয়ে তাঁর দেশের স্ত্রী জাতির বন্ধন মুক্তির কাজ করে বিদ্যাসাগর আগামী দিনের ভারতের ঘরে ঘরে আদর্শ ব্যক্তি ও মানব কল্যাণের প্রতীক হয়ে উঠেছিলেন।’

সমাজ সংস্কারক, শিক্ষাবিদ এবং নারী শিক্ষার অন্যতম পথিকৃৎ ঈশ্বরচন্দ্র বিদ‍্যাসাগর আমাদের কাছে আজও প্রাসঙ্গিক কারণ এখনও দেশের আনাচে কানাচে নারীদের লাঞ্ছিত হতে হয়। আজও পণের বলি হতে হয় নারীদের। নারী নির্যাতন রোধ করতে, লিঙ্গ বৈষম্য দূর করতে, এবং নারীর ক্ষমতায়নের প্রচেষ্টাকে এগিয়ে নিয়ে যেতে বিদ্যাসাগরের ভাবনাকে আমাদের বেশি বেশি করে ছড়িয়ে দিতে হবে ।

( যশোবন্ত রায় রাধামাধব কলেজ, শিলচর-এর দর্শন বিভগের অবসরপ্রাপ্ত বিভাগীয় প্রধান । )

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!