The Mirrow

উগ্র ধর্মান্ধতা

Share the Article

পরিতোষ চন্দ্র দত্ত

একথা বলার অপেক্ষা রাখে না যে ধর্ম তথা ধর্মীয় চেতনা বা সাম্প্রদায়িকতা আমাদের দেশের সমাজ বা পার্শ্ববর্তী  রাষ্ট্রের সমাজ ও আর্থ-রাজনৈতিক জীবনে বিষবাষ্প ছড়িয়ে দিয়েছে৷  সাম্প্রদায়িক চেতনাবোধই  আজকের সময়কে গভীরভাবে প্রভাবিত করে চলেছে৷ ধর্মীয় বিচার বিবেচনার দ্বারাই আজকের রাজনৈতিক দল তার কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে চলেছে৷ ফলস্বরূপ আজকের রাজনীতিতে ধর্ম সহ বিভিন্ন সাম্প্রদায়িকতাই শক্তিশালী নির্ধারক হয়ে উঠছে৷ আজকের সুশীল সমাজ লক্ষ করলেন যে বাংলাদেশের হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষ তাদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় তথা সামাজিক আনন্দোৎসব দুর্গাপুজো পালন করতে গিয়ে এক মর্মান্তিক ঘটনার সাক্ষী হয়ে থাকল যা কোনভাবেই কাম্য ছিল না৷ সেই দেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এক সভায় যদিও বলেছেন, ধর্ম যার যার -উৎসব সবার, কিন্তু ধর্মীয় হিংসা আজও অব্যাহত রয়েছে৷ অবস্থার সুযোগ নিয়ে দুষ্কৃতিরা হিন্দু মন্দিরগুলোতে এখনও তাণ্ডব চালিয়ে ভাঙচুর লুটপাট করে যাচ্ছে৷ পুজোমণ্ডপে নির্বিবাদে হামলা, লুটপাট, হত্যা, মন্দির ভাঙচুরের ঘটনায় কারা জড়িত তাদের খুঁজে বের করার দায়িত্ব সরকারের৷ বিদেশি শক্তির হাত থাকার সম্ভাবনা রয়েছে বলে শুধু বক্তব্য না রেখে হাসিনা সরকারের উচিত আসল রহস্যকে খুঁজে বের করা এবং দেশের সংখ্যালঘু জনগণের পুরো নিরাপত্তা দেওয়ার পাশাপাশি দোষীদেরকে এমনভাবে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়া, যাতে ভবিষ্যতের জন্য উদাহরণ হয়ে থাকে৷ জনগণ অবশ্যই লক্ষ রাখবেন যে শেখ হাসিনা দোষীদের উপযুক্ত শাস্তি দিতে পারলেন কি না৷ এই উগ্র ধর্মীয় উন্মাদনার বিষবাষ্প আমাদের দেশেও ছড়িয়ে পড়ছে এবং সুস্থ সামাজিক পরিবেশকে কলুষিত করার প্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছে৷ এ ব্যাপারে আমাদের দেশের সরকারকেও সজাগ থাকতে হবে যাতে ধর্মীয় উন্মাদনার বশবর্তী হয়ে এদেশের সামাজিক সম্প্রীতিকে  যেন নষ্ট করা না হয়৷ এখানে এটাও উল্লেখনীয় যে আমাদের রাজ্যের গোলাঘাটে পুজো করতে না দেওয়ার ঘটনাও কিন্তু খুবই নিন্দনীয়৷ এ ব্যাপারে রাজ্য সরকারের প্রশাসনিক ব্যাবস্থা উগ্রজাতীয়তাবাদের কাছে নতি স্বীকার করে দৃঢ় পদক্ষেপ নিতে না পারায় রাজ্য সরকারেরও সমালোচনা হতেই পারে৷ উগ্রধর্মান্ধতা বা উগ্র জাতীয়তাবাদ হচ্ছে সমাজের শত্রু, রাষ্ট্রের শত্রু ও গণতন্ত্রের শত্রু। এদের বিরুদ্ধে সরকারের পাশাপাশি সাংবাদিকদেরও দায়িত্বশীল হওয়া উচিত৷ উগ্র সাম্প্রদায়িকতা, উগ্র জাতীয়তাবাদ, উগ্র ধর্মান্ধতা  ইত্যাদি সকল অন্যায়ের বিরুদ্ধে শক্তিশালী প্রতিবাদ হওয়া উচিত। এসব তখনই পুরোপুরি সম্ভব যদি সুচিন্তক জনগণ তাদের সর্বোচ্চ সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেন। আমি  এই ঘটনার কঠোর ভাষায় নিন্দা জানাই এবং  সমস্ত নোংরা রাজনীতির পথ পরিহার করে শুভবুদ্ধিসম্পন্ন সমস্ত জনগণকে এগিয়ে এসে এক সুস্থ শান্তিপূর্ণ সমাজ গড়ে তোলার আহ্বান জানাই, যেখানে শান্তিপ্রিয় জনগণ সমস্ত রকম ভেদাভেদ ভুলে  মিলেমিশে একসাথে কাজ করে এক উন্নত সমাজ তথা উন্নত রাষ্ট্র তৈরির পথে এগিয়ে যেতে পারে৷

( ড০ পরিতোষ চন্দ্র দত্ত হাইলাকান্দি জেলার এস এস কলেজের প্রাক্তন অধ্যক্ষ। এই নিবন্ধে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। )

1 thought on “উগ্র ধর্মান্ধতা”

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!