The Mirrow

এনারসি, ডি-ভোটার ইস্যু // শিশির দে-র রায় – নতুন আলোর দিশারী

Share the Article

মিরো ওয়েবডেস্ক ; ২৪ আগস্ট ২০২১

বিগত দিনগুলোতে এনারসি/ডি-ভোটার নিয়ে অনেক সিদ্ধান্তই একতরফা হচ্ছে বলে বিভিন্ন মহলে অভিযোগ রয়েছে। এই পরিস্থিতিতে এফটি বা ফরেনার্স ট্রাইব্যুনালের একটি সাম্প্রতিক রায়/অভিমত বিষয়গুলোকে পুনর্বিবেচনায় নিয়ে আসল। করিমগঞ্জের দু-নম্বর ফরেনার্স ট্রাইব্যুনালের  ১২৯/২০১৭ নম্বর এফটি মামলায় গত ১০ সেপ্টেম্বর ২০২১ তারিখের রায় অনেককেই জাগিয়ে তুলতে সহায়কের ভূমিকা পালন করবে বলে সংশ্লিষ্ট মহলের অভিমত। যেমন, সমাজকর্মী আশিস চৌধুরীর ভাষায় “নিজের গন্ডির মধ্যে থেকে এই-ধরণের ‘ভালো লাগা’ কাজ করার অভ্যাস যদি আমরা সকলে আয়ত্ত করে  নিতে পারি তবে মাথে উঁচু করে টিকে থাকার সাহস আমাদের বাড়বে, আর তখনই আত্মসম্মান অক্ষুণ্ণ রেখে টিকে থাকার জন্য যুদ্ধ চালিয়ে যেতে পারব।”

এই এফটি-র রায়/মতামত দীর্ঘদিন হিমঘরে থাকা এনআরসি ইস্যুকে আবার আলোচনায় ফিরিয়ে আনতে সফল হয়েছে। স্থানীয় ও জাতীয় স্তরের সংবাদমাধ্যমে এই ব্যাপারটি নিয়ে বিস্তর আলোচনা চলছে। আর এতেই এই রায়/মতামতের সাফল্য। সেই মামলার বিবাদী বিক্রম বাবুর (বিক্রম সিংহ) ভাগ্যে কী লেখা রয়েছে তা সময়ই বলবে। কারণ, এই ডি-ভোটার বিষয়টি নিয়ে আইনি মারপ্যাঁচের বাইরেও প্রশাসনিক অনেক প্রতিকূলতা রয়েছে যার বিস্তারিত আলোচনা থেকে বিরত থাকাটাই (বিক্রমবাবুর স্বার্থে) সঙ্গত। তবে, ফরেনার্স ট্রাইব্যুনালের  এই-ধরনের রায়/মতামতের পুনর্বিবেচনার লক্ষ্যে বিগত দিনে জারি করা প্রশাসনিক বিজ্ঞপ্তি বিনা প্রতিবাদেই মেনে নেওয়া হয়েছে বলে আশিস চৌধুরীর মতো অনেকেরই আক্ষেপ। তাই, আজকের দিনে ফরেনার্স ট্রাইব্যুনালের জারি করা রায়/মতামত ন্যায়সঙ্গত কী না তা পুনর্মূল্যায়নের করার প্রক্রিয়া শুরু করার সুযোগ ও অধিকার স্পষ্টভাবে প্রশাসনিক স্তরে সরকারের কাছে রয়েছে।

আসামের মাননীয় মুখ্যমন্ত্রী যে করিমগঞ্জের ফরেনার্স ট্রাইব্যুনালের রায়কে গুরুত্বহীন বলেছেন – এর পেছনে অবশ্যই এ-ধরনের প্রক্রিয়া শুরু করার ইঙ্গিত রয়েছে বলে অনুমান করাই যায়। এখানেই অনেকে বিক্রমবাবু এবং তাঁর মতো অনেক ডি-ভোটারদের ভবিষ্যৎ সম্পর্কে সিঁদুরে মেঘ দেখছেন। তবে সরকার এই রায়কে নাকচ করতে পারবে না, সরকার উচ্চ ন্যায়ালয়ে এর বিরুদ্ধে আবেদন করতে পারে, সিদ্ধান্ত কেবল ন্যায়ালয় নিতে পারবে। আর এখানেই বিক্রমবাবুর প্রাথমিক জয়।

তবে, বিক্রমবাবুর ক্ষেত্রে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত যাই হোক, করিমগঞ্জের দু-নম্বর এফটি শিশির দে-র রায়/মতামত দুটি ব্যাপারে আলোচনার ক্ষেত্র প্রস্তুত করে দিয়েছে বলে অভিজ্ঞ মহলের অভিমত। প্রথমত, জন্মসূত্রে নাগরিকত্ব নিয়ে এই রায়/অভিমত আগামীতে ব্যাপারটি নিয়ে আইনি আলোচনার জাল বিস্তার করবে। এটি এক শুভ লক্ষণ। আরেকটি ব্যাপার হচ্ছে, ২০১৯-এর ৩১ আগস্ট প্রকাশিত ‘নবায়িত নাগরিকপঞ্জি’  চূড়ান্ত কী না এ-নিয়ে বিগতদিনে যে সংশয়ের আবহ সৃষ্টি করা হয়েছে সেই ব্যাপারে শিশির দে-র এই রায়/মতামত খুব স্পষ্ট এবং তাই সেটি এনারসি-কে আবার আলোচনায় ফিরিয়ে এনেছে।

মাননীয় উচ্চতম ন্যায়ালয়ের তত্ত্বাবধানে পরিচালিত নাগরিকপঞ্জি নবায়ন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বিগত ৩১ আগস্ট ২০১৯ তারিখে নবায়িত নাগরিকপঞ্জির ‘চূড়ান্ত তালিকা’ প্রকাশিত হয়েছিল বলেই সকলের জানা ছিল, যে তালিকাটি রাজ্য সমন্বয়কের সরকারি ওয়েবসাইটে এখনও আবেদনকারীদের জন্য রয়েছে (www.nrcassam.nic.in)। সেই তালিকাতে প্রায় ১৯ লক্ষ আবেদনকারীর নাম বাদ পড়েছিল। সেই তালিকা তৈরির ক্ষেত্রে দীর্ঘদিনের মানবসম্পদ ও অর্থ ব্যয়ের পরিমাণ, আবেদনকারীদের যন্ত্রণা-অভিযোগের কথা সর্বজনবিদিত। কিন্তু, সেই তালিকাকে ‘চূড়ান্ত তালিকা’ হিসেবে মানতে নারাজ একটি মহল। বেশ ক’মাস আগে এনারসির রাজ্য সমন্বয়ক হিতেশ দেবশর্মা মাননীয় গৌহাটি উচ্চ ন্যায়ালয়ে এক হলফনামা জমা করে প্রকারান্তরে মত প্রকাশ করেছিলেন যে ৩১ আগস্ট ২০১৯-এ প্রকাশিত নবায়িত নাগরিকপঞ্জি কেবল একটি পরিপূরক তালিকা বা সাপ্লিমেন্টারি লিস্ট। সেই তালিকাটি পুরোপুরি পুনর্মূল্যায়নের আবেদন আদালতে জানিয়েছেন তিনি। এই প্রেক্ষাপটে শিশির দে-র রায়/মতামত নাগরিকপঞ্জি নিয়ে আলোচনার এক নয়া দারোৎঘাটন করল বলেই অনেকের মত। একাংশ ব্যবহারজীবীদের মতে শিশির দে যথার্থই মন্তব্য করেছেন। মাননীয় উচ্চতম ন্যায়ালয় নির্দিষ্ট সময়সীমা ধার্য করে দিয়েছিলেন যার সূত্র ধরে ২০১৯-এর ৩১ আগস্ট নবায়িত পূর্ণ নাগরিকপঞ্জি প্রকাশিত হয়েছে। খসড়া আগেই (২০১৮) প্রকাশিত হয়েছিল, এর সাথে ২০১৯-এর ৩১ আগস্ট পরিপূরক তালিকা স্থানীয়ভাবে এবং সম্পূর্ণ তালিকা অনলাইনে (ওয়েবসাইটে) প্রকাশ করা হয়েছিল। সেটাই চূড়ান্ত যতক্ষণ না পর্যন্ত উচ্চতম ন্যায়ালয় অন্য কোনো নির্দেশিকা জারি করছেন বা অন্য কোনো মন্তব্য করছেন। এই ব্যাপারে ভিন্ন মন্তব্য করার বা ‘সেটি চূড়ান্ত নয়’ এই কথা বলার অধিকার কেবল উচ্চতম ন্যায়ালয়েরই রয়েছে।   এখানে উল্লেখ করা আবশ্যক যে চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশের দু’বছর হয়ে যাওয়ার পরও এনারসি-ছুট আবেদনকারীদের রিজেকশন স্লিপ দেওয়া হচ্ছে না, তারা জানতে পারছেন না কী কী কারণে তাদের নাম বাদ পরেছে। সেইসঙ্গে, প্রায় ২৬ লক্ষ মানুষের বায়োমেট্রিক আইডেন্টিটি ফ্রিজ বা আটক করে রাখার ফলে তারা আধার কার্ড পাচ্ছেন না এবং বিভিন্ন সরকারি প্রকল্পের সুবিধা থেকে দীর্ঘদিন বঞ্চিত রয়েছেন। তাই সামগ্রিকভাবে এই বিষয়গুলো বিবেচনায় শিশির দে-র এই রায় বা অভিমত আজকের দিনে খুবই সাহসী এবং গুরুত্বপূর্ণ বলে সচেতন মহলের অভিমত।

 

1 thought on “এনারসি, ডি-ভোটার ইস্যু // শিশির দে-র রায় – নতুন আলোর দিশারী”

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!