The Mirrow

যথার্থ অভিভাবক হয়ে ওঠা সময়ের দাবি

Share the Article

অর্পিতা চৌধুরী

আমাদের পরিবারতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থা থেকে একান্নবর্তী পরিবারের ধ্যানধারণা লোপ পেয়েছে বহুকাল হল। এই প্রগতিশীল সমাজে যেখানে প্রত্যেকে অন্যকে ডিঙিয়ে এক ইঁদুর দৌড়ে শামিল সেখানে যৌথ পরিবারের সদস্যদের মধ্যে আত্মিক টান শিথিল হয়ে যাওয়া কোনো আশ্চর্য ঘটনা নয়। তাই বর্তমান সময়ে পরিবার বলতে আমরা যা বুঝি তা হল একক পরিবার অর্থাৎ মা বাবা ও সন্তান। কিন্তু ইদানীং কালে একক পরিবার গুলো সঠিক অভিভাবকত্বের অভাবে একদিকে এক উচ্ছৃঙ্খল আরেকদিকে এক অবসাদগ্রস্ত সমাজের জন্ম দিচ্ছে তার হিসেব কষতেই আজ দাঁড়িপাল্লা হাতে নিয়ে লিখতে বসেছি, এই দাঁড়িপাল্লার একদিকে রয়েছে সন্তানেরা আর আরেকদিকে তাদের অভিভাবক অর্থাৎ মা-বাবারা। আতস কাঁচের তলায় মৌলিক স্তরে আমাদের সমাজের বর্তমান অবস্থা উপলব্ধি করতে চাওয়াই আমাদের উদ্দেশ্য।

আমরা প্রায়শই এমন অভিভাবকদের দেখা পাই যারা পদে পদে নিজেদের সন্তানকে অন্যের সন্তানের সঙ্গে তুলনা করেন। এধরনের ব্যবহার শুধুমাত্র সন্তানের ওপর মানসিক চাপ সৃষ্টি করে না তাদের আত্মবিশ্বাসেও ক্ষয় ধরায়। কিছু ক্ষেত্রে এর ঠিক উল্টো উদাহরণও আমরা দেখতে পাই, যেখানে অভিভাবকদের দেখা যায় নিজেদের সন্তানকে প্রসংশার স্রোতে ভাসিয়ে দিতে, এমনকি এজন্য অন্যের সন্তানের নিন্দা ও সমালোচনা করতেও তারা পিছপা হন না। এ ধরনের পিতা মাতার সন্তানেরা ভবিষ্যতে উচ্ছৃঙ্খল, হঠকারী হতে দেখা যায় এবং তাদের মধ্যে বিনম্রতার অভাব দেখা যায় যা সমাজের জন্য বিশেষ উপকারী বলে মনে হয়না।

কিছু অভিভাবকেরা নিজেদের সাধ্যের বাইরে গিয়ে সন্তানদের চাহিদা পূরণ করেন আর তাদের সন্তানদের ধারণা হয় এটি তাদের জন্মসিদ্ধ অধিকার। তাই ভবিষ্যতে তাদের কোনো চাহিদা পূরণ না হলে তারা মা বাবার বিরুদ্ধাচরণ শুরু করে এবং পারিবারিক অশান্তির সূত্রপাত হয়। তাই এই পরিস্থিতি এড়াতে অভিভাবকদের উচিত সন্তানদের সকল পার্থিব চাহিদা পূরণের জায়গায় তাদের মধ্যে বীজ থেকেই মূল্যবোধ জাগিয়ে তোলা।

আবার এমনও কিছু অভিভাবক আছেন যারা সন্তানদের জীবনের যাবতীয় কার্যকলাপ নিজেরা নিয়ন্ত্রণ করতে পছন্দ করেন। এতে সন্তান ভবিষ্যতে জীবনের নানান আবশ্যকীয় সিদ্ধান্ত নিতে অপারগ হয় এবং তার আত্মবিশ্বাসে ক্ষয় ধরে আর সে অবসাদের পথে এগিয়ে যায়।

নিঃসন্দেহে কোনো মা বাবাই তাদের সন্তানদের মন্দ চান না। কিন্তু মা বাবা বলেই যে সবাই সঠিক অভিভাবকত্ব সম্বন্ধে জ্ঞাত হবেন বর্তমান প্রজন্মকে দেখে তার কোনো প্রমাণ পাই না। আপাতদৃষ্টিতে ধর্ম, রাজনীতি, দুর্নীতি ইত্যাদি গুরুগম্ভীর আলোচনার মাঝখানে সঠিক অভিভাবকত্বের প্রয়োজনীয়তা একটি তুচ্ছ বিষয় বলে মনে হলেও একটি সুষ্ঠু সমাজ গড়ে তুলতে এর প্রভাব কোনো অংশে কম নয়। তাই এই বিষয়টি নিয়ে বর্তমান প্রজন্মের অভিভাবকদের বিশদ আলোচনা করার প্রয়োজন আছে বলে আমার মনে হয়।

2 thoughts on “যথার্থ অভিভাবক হয়ে ওঠা সময়ের দাবি”

  1. আতস কাঁচ আতশ নয়….
    অভিমন্যু যুদ্ধের কৌশল ( অসম্পূর্ন) শিখেছিল মায়ের গর্ভে…
    .বাকিটা বুঝে নাও…

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!