The Mirrow

হরি, দিন ত গেল, সন্ধ্যা হ’ল পার কর আমারে

Share the Article

বিবেকানন্দ মোহন্ত

এক

আজ জীবনের অপরাহ্ন বেলার দোরগোড়ায় দাঁড়িয়ে শৈশব-কৈশোরের কত স্মৃতিই না ভেসে ওঠছে চোখের সামনে। সেসব চলমান সোনার তরীতে ঠাঁই নেওয়ার যোগ্যই ছিলনা, বরং ছি ছি, দূর ছাই’র পর্যায়ভুক্তই ছিল, তা নির্দ্বিধায় বলা যেতে পারে। তথাপি নিছক খেয়ালবশত তার এক একটি খণ্ডচিত্র তুলে ধরতে চেষ্টা করছি।

মনে পড়ে ভরা বর্ষার চাঁদনি রাতে একা একাই ডিঙ্গি নিয়ে বেরিয়ে পড়তাম দিগন্তবিস্তৃত হাওরে, যেটি শনবিলের সম্প্রসারিত অংশই বলা যেতে পারে। চারদিকেই উত্তাল জলরাশি, গভীরতা কোথাও সাত-আট ফুট, আবার কোথাও বারো-চৌদ্দ ফুট। হালকা  বাতাসেও ঢেউয়ের দপদপানি জেগে উঠত তিন/ চার ফুট পর্যন্ত। মনে কোনো ভয় ছিলনা, সাঁতারে বেশ পাকাপোক্তই ছিলাম। ঢেউতাড়িত ডিঙ্গিতে  জল ঢুকলেও কুছ পরোয়া নেহি, সেটা বের করার যাবতীয় কলাকৌশলও জানা ছিল। এভাবেই কখনও কখনও নিশুতি রাতে ডিঙ্গি বেয়ে হাজির হতাম হাওরের কূলঘেষা বহুশতাব্দী প্রাচীন দেবস্থান কালীনগরের কালীবাড়িতে। শনবিলের বুকে অনুরূপ একটি দেবস্থান রয়েছে দেবদ্বার/দেওধার কালীবাড়ি নামে – এটি নিয়ে  পরবর্তী সময়ে আলোচনা করার চেষ্টা করব।

যাইহোক্, কালীনগর-কালীবাড়িতে অধিষ্ঠিত হয়ে আছেন শ্রীশ্রীকালীমাতা, সাথে রয়েছেন মহাদেব, কালভৈরব, মা-শীতলা, রাধাগোবিন্দ ছাড়াও আরও দু’এক জন এবং এক কোণে রয়েছে বাদশার থানও। লোকশ্রুতি যে, রাত গভীরে ব্যাঘ্ররূঢ়া দেবতা কিংবা বাদশা টিলাবেষ্টিত দেবস্থানে জাগ্রত হয়ে ওঠেন এবং পরিক্রমা করেন গোটা গ্রাম সহ এই চত্বরজুড়ে। এই বিষয়টি খুব দাগ কেটেছিল মনে, তাই একাকী নৌকাবিহারের অন্তর্ভুক্ত থাকত এই স্থানটিও। গভীর রাত অবধি ঠায় বসে থাকতাম নিদ্রাচ্ছন্ন সুবিশাল ও সুপ্রাচীন বটবৃক্ষের ছায়াতলে। দামাল কিশোরের প্রতি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টি নিয়েই হয়ত অবয়বকে যথাসম্ভব আড়াল রেখে তাঁদের নৈশপরিক্রমা চলত, চর্মচক্ষে সেইসব  পরিক্রমা অবলোকন কিংবা উপলব্ধি করার সে সৌভাগ্যটুকুও হয়ে ওঠেনি কোনোদিন। শুধু বারকয়েক শিবাকুল দলবেঁধে অতিথিকে দেখে যেত খানিক দূরে দাঁড়িয়ে এবং গণসঙ্গীতের মাধ্যমে  তাদের মালিকানার বিষয়টি স্মরণ করিয়ে দিয়ে যেত। এবং আজও করে।

প্রকৃতির কোলে বেড়ে ওঠা এই দেবস্থানের প্রাকৃতিক পরিবেশকে আমরা ধ্বংস হতে দেইনি, বরং বাঁচিয়ে রেখে চলছি এবং তার সাথে বাঁচিয়ে রেখে যাচ্ছি শিবাদের জন্য নির্ধারিত সুনিবিড় স্থানটুকুও। পালা-পার্বন ছাড়াও প্রতি রোববার এখানে উৎসবমুখর পরিবেশ সৃষ্টি হয়ে থাকে। আগেও পালা করে গোটা দিন জুড়ে কীর্তন, ধামাইল, সন্ধ্যারতি চলত, প্রসাদ বিতরণ করা হত উপস্থিত সবাইকে। নির্ধারিত স্থানে শিবাভোগও নিবেদন করা হত — যার জন্য সবাই সারিপেতে বসে থাকত, আজও এই দৃশ্যপটের তেমন কোনো তারতম্য চোখে পড়েনা। অপরাহ্নের দোরগোড়ায় দাঁড়িয়ে সময় খোঁজে নিয়ে আজও ছুটে যাই এই দেবস্থানে, এবং ছুটে যাই এখানকার রাধাগোবিন্দের আশীর্বাদধন্য সপ্ততিপরা বোষ্টমীর ঐশী সান্নিধ্য লাভের আশায়। এবং সেভাবেই ছুটে যাই প্রকৃতির কূলে দাঁড়িয়ে থাকা লক্ষ্মীনগরের সুপ্রাচীন সন্ন্যাসীটিলার আশ্রমেও।

দুই

শৈশব-কৈশোরের বহু স্মৃতিজড়িত খেলার মাঠের উত্তর প্রান্তে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে রয়েছে সন্ন্যাসীবাড়ি-সন্ন্যাসীটিলা, রয়েছে রাধাগোবিন্দের আশ্রম-আখড়াও। এবং রয়েছেন বোষ্টম-বোষ্টমীরাও। লোকায়ত পরিসরের প্রকৃতির কোলে বেড়ে ওঠা  টিলা চত্বরে ফল-ফুলের গাছ-গাছালি ঘেরা এই ঐশীভূখণ্ডের শিখরস্থানে  রয়েছেন ধ্যানমগ্ন সন্ন্যাসীরূপী মহাদেবও। এখানে রথের মেলা বসে প্রতি আষাঢ় ও মকরসংক্রান্তিতে। বহুদিন পর এক সন্ধ্যায় গিয়েছিলাম এই দেবালয় প্রাঙ্গণে। সন্ন্যাসী পাট্টা প্রদক্ষিণ করতে করতে কানে বাজল করুণ আকুতিমিশ্রিত  সুমিষ্ট সুরের এক কালজয়ী গান, ভেসে আসছে শো-দেড়শো হাত দূরের রাধাগোবিন্দের আশ্রম থেকে। গানটি শুনতে শুনতে ওখানে গিয়ে হাজির হলাম। চোখে পড়ল মন্দিরের দাওয়ায় বসে একাকি গেয়ে চলছেন একজন বোষ্টমি —

  “হরি দিন ত গেল সন্ধ্যা হ’ল পার কর আমারে।

  আমি আগে এসে, ঘাটে রইলাম বসে,  ——“

চেয়ে দেখলাম ইনিই তো আমাদের সুশীলা মাসি, তাঁর সাথেই তো বহুদিন আগে রংপুর-কালামাগুরা-ভিতরবালিয়ার অরণ্যভূমে বেড়িয়ে এসেছিলাম। দেখলাম মেঝেতে ছোট কাঁশরটি রেখে তালে তাল মিলিয়ে দণ্ড (বড় কাঠি) দিয়ে বাজিয়ে চলছেন সেটি এবং গেয়ে চলছেন —

  ” — যারা পাছে এল, আগে গেল, আমিই রইলাম পড়ে।

    —— পড়ে অকুল সাঁতারে পাথারে।”

অশীতিপর বোষ্টমীর দু’চোখ ভরা অশ্রুধারা কপোল গড়িয়ে ঝরছে অবিরত। চোখ বুজে তিনি যেন নিবিষ্টচিত্তে নিজেকে সঁপে দিচ্ছেন শ্রীগোবিন্দের পাদপদ্মে। মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে ঠাঁয় দাঁড়িয়ে রয়েছিলাম অনেকক্ষণ, নীরবে  প্রণতি জানালাম ভবসিন্ধু পারাপারের মহাকাণ্ডারীর উদ্দেশ্যে। ভাবপ্রবণ পরিস্থিতিতে ধ্যানরত সুশীলা মাসিকে  পার্থিব জগতে ডেকে আনাটা বোধহয় সমীচীন হবেনা,  তাই ভারাক্রান্ত মনে ধীরপায়ে ফিরে এসেছিলাম সেদিন।

তিন

বাড়িতে পরব-পার্বনে দূরগাঁয়ে নেমন্তন্নের দায়ভার বর্তাত আমার ওপর। এই উপলক্ষ্যে এক সন্ধেবেলায় গিয়ে হাজির হয়েছিলাম ভাঙ্গার নিকটবর্তী কোনো এক আত্মীয়-বাড়িতে। বিজলির অনুপ্রবেশ তখনও তেমনভাবে ঘটেনি গ্রাম-গঞ্জে। এখানে এসে দেখলাম বাড়িটির লম্বা উঠোনের প্রায় তিনদিক জুড়েই রয়েছে পরিত্যক্ত ভিটে। খানিক উঁচু এই স্থানগুলোতে এখন ডেঙ্গা বা ডাটাগাছ, কাঁচালঙ্কা, পুঁইশাক, সুগন্ধি শুকতো পাতা, ওষধিগাছ বাসক প্রভৃতি লতা-গুল্মে আসর জমিয়েছে। এক কোণে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে  রয়েছে দু’চারটি পেঁপে গাছ এবং সাথে রয়েছে বারোমাসি বার্তাকুও। এইসব গুল্ম-লতিকা-বৃক্ষের পারস্পরিক নিকট সম্পর্ক রয়েছে ছাপোষা গ্রাম্য রসুইঘরের পদ-পাঁচালিতে। একটু উঁচু স্থানই এদের প্রিয়, তাই ফলনও বেশি হয়ে থাকে, এক্ষেত্রে পরিত্যক্ত ভিটে হলে তো আর কোনো কথাই নেই!

উঠোনের বাঁদিকের কোণে উত্তরের দেবালয়ঘেষা চত্বরে শিবরাত্রির সলতের মত শুধু দাঁড়িয়ে রয়েছে বহু পুরোনো বাস্তুভিটার অংশবিশেষ মাত্র।

সায়ং-সন্ধ্যায় এ বাড়িতে গিয়ে দেখেছিলাম বারান্দায় পিলসুজের উপর ভর করে টিম টিম করে জ্বলছে পিতলের এক কুপিবাতি। সারা বাড়িই ফাঁকা — শুধু একজন ছাড়া। দেখলাম,  প্রায় অশীতিপর এক মানবী বসে রয়েছেন ঠাকুর মণ্ডপের দাওয়ায়। নাগকেশরের প্রাচীন খুঁটিতে হেলান দিয়ে ইনি চোখবুজে মেঝেতে রাখা কাঁশরে তালে তাল মিলিয়ে কাঁপা কাঁপা কন্ঠে গেয়ে চলছেন —

 ” হরি দিন ত গেল, সন্ধ্যা হ’ল, পার কর আমারে… ।”

প্রদীপের আলোয় স্পষ্ট দেখতে পেলাম তাঁর দু’চোখ উপছে অবিরত কপোল গড়িয়ে ঝরিয়ে পড়ছে অশ্রুধারা। ঠাঁয় দাঁড়িয়ে থেকে একসময় সারা বাড়ি-উঠোনের এপাশে-ওপাশে চোখ বুলিয়ে নিলাম, অলক্ষ্যে দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে পড়ল বুক চিরে। ওদিকে শ্রীকৃষ্ণ-গোবিন্দের পাদমূলে প্রবীণা নিবেদন করে চলছেন —

 “যাদের পথের সম্বল, আছে সাধনার বল,

তারা নিজ বলে, গেল চ’লে অকুল পারাবারে।

 শুনি, কড়ি নাই যার, তুমি কর তারেও পার,

 আমি দীন-ভিখারী, নাইক কড়ি, দেখ ঝুলি ঝেড়ে …”

প্রার্থনা শেষ হওয়ার পর ধীর পায়ে এগিয়ে গেলাম ঠাকুরঘরের দিকে। প্রণাম করে আমার আসার কারণ জানালাম। তাঁর পীড়াপীড়িতে এক রাত কাটিয়েও ছিলাম সেখানে। এ বাড়ির বর্তমান প্রজন্মের এ-ঘর, ও-ঘরের সদস্যরা যে যখানে কর্মসূত্রে পাড়ি দিয়েছিলেন, তারা সেখানেই পাকাপাকিভাবে ঘর করেছেন। তাঁর ছেলেরা বারকয়েক নিয়ে যেতে এসেছিলেন, কিন্তু স্বামী-শ্বশুড়ের ভিটেটি রোদ পোহাক,  সেটা তিনি মেনে নিতে পারেননি। তাই গৃহদেবতার শ্রীচরণাশ্রয়ে থেকে  ইহলোকের বাকি দিনগুলো এখানেই কাটিয়ে যেতে চান তিনি। রাত্রিবেলা এপাড়ার ছোট একটি ছেলে এসে থাকে, তার বাবা এবাড়িরই ফাই-ফরমাশ খাটে, আবার ক্ষেত-খামারের কাজও সামলায়। মহাপ্রভু অন্তপ্রাণ বৃদ্ধার জীবন-দর্শন, চিন্তা-চেতনায় একপ্রকার নিরুত্তর হয়ে গেছিলাম সেদিন।

অনিসন্ধিৎসু মন নিয়ে একটু খোঁজ করলে দেখা যাবে, আমাদের গ্রাম-বরাকে এরকম অনেক পুরোনো একান্নবর্তী পরিবারের দৃশ্য একই। এসব ক্ষেত্রে সামূহিক প্রত্নস্মৃতি, ধর্মীয় চিন্তাভাবনার ধারাবাহিকতা ইত্যাদি সহায়ক ভূমিকা নিয়ে থাকে, যেগুলো সংশ্লিষ্ট পরিবারেরই একজন ঐশীমননশীল প্রবীণাকেও একা থাকার প্রেরণা যোগাতে সক্ষম হওয়ার দাবি রাখে।

চার

উপরোক্ত দু’টি দৃশ্যপটের মধ্যে প্রথমটি ছিল এক বাল্যবিধবার আশৈশব কাল থেকে গোবিন্দের শ্রীচরণে আত্মনিবেদনমূলক চিত্র এবং দ্বিতীয়টি অপরাহ্ন বেলাশেষের এক করুণ দৃশ্য। উভয়ের কৃচ্ছ্রসাধনের উদ্দেশ্য একটিই, সেটি ভবসাগরের খেয়া পারাপারের তরীতে ঠাঁই নিয়ে ইহলোকের মায়ার বন্ধনপাশ থেকে চিরমুক্তির পথে এগিয়ে চলা। উভয়েই গ্রাম বাংলার লোকায়ত পরিসরের ঐশী চিন্তা-চেতনার উৎকৃষ্ট উদাহরণ। নীরবে নিভৃতে এরূপ সাধনাই লোকমানসে ঠাঁই করে নিতে পেরেছিল প্রাক্-চৈতন্য থেকে চৈতন্য-উত্তর পর্ব পর্যন্ত, যার অবশেষটি আজও বেঁচে আছে প্রান্তিকায়িত ভুবনের লৌকিক পরিসরে।

সুশীলা বোষ্টমীরা আখড়ার তপোবনাশ্রমে থেকে খঞ্জনি-মন্দিরার তালে তালে শ্রীরাধাগোবিন্দের ভজন-আরতি গানে মেতে ওঠেন দিবা-নিশি। ভিক্ষু-ভিক্ষুণী বেশে ওরা ফসল তুলতে বেরোন লোকায়ত পরিসরের গ্রাম থেকে গ্রামান্তরে, পরনে থাকে তাঁদের আটপৌরে শুচিশুভ্র বস্ত্র, কন্ঠে তুলসীমালা এবং যথারীতি মৃতিঙ্গায় তিলক-রসকলি সুশোভিত হয়ে। তাঁদের কাঁধে থাকে শ্বেতশুভ্র কাপড়ের ঝুলি, হাতে ঝা-চকচকে কাঁশা কিংবা পিতলের ঘড়া (লোটা) এবং এটির মধ্যেই ফসল তুলে দিতে হয়। গৃহস্থের দেবালয় প্রাঙ্গণে দাঁড়িয়ে খঞ্জনি-মন্দিরা বাজিয়েও তাঁরা শ্রীরাধাকৃষ্ণ বিষয়ক গান শুনিয়ে যান সুললিত-সুমধুর কন্ঠে। এই আখড়া কিংবা সংঘ সংস্কৃতি কোনো অর্বাচীন কালের নয়। প্রান্তিক বাংলার সামাজিক ইতিহাস নিয়ে যাঁরা চিন্তা-চর্চা করেন, তাঁরা নিশ্চয়ই এর সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের প্রাচীনত্ব স্বরূপ সম্পর্কে বলতে পারবেন।

অপরদিকে যথারীতি সংসারধর্ম পালন করেও শ্রীরাধাকৃষ্ণ সাধন-ভজনের প্রচলনও সুরমা-বরাকে সমান্তরাল ভাবেই বিদ্যমান রয়েছে বহুকালধরে। এর পাশাপাশি আরেকটি রূপও দেখতে পাওয়া যায়। এরা ভেকধারি বোষ্টম-বোষ্টমী, যেটি লোকজীবনের অঙ্গ হিসেবে প্রতীয়মাণ হয়েছিল এই প্রান্তিক পরিসরে। এবং এটি নিশ্চিতভাবেই ছিল বানপ্রস্থ পর্ব। এইসব ক্ষেত্রে দেখা যায় সংসার জীবনে থেকে পুত্র-কন্যাদের প্রতিষ্ঠার পথ প্রশস্থ করেই বৃদ্ধ দম্পতিরা ভেকধারি আশ্রমিক হয়ে যেতেন, এ দৃষ্টান্তটি বিরল ছিল না আমাদের গ্রাম কিংবা পড়শীপাড়ায়। যেমন বিরল থাকেনি করিমগঞ্জ উপকন্ঠের এক লোকায়ত পরিসরেও। রামায়ত বৈষ্ণব এবং কুন্দলতা দাসী বৈষ্ণবী ছিল তাঁদের আশ্রমিক জীবনের নাম ও পদবী, এখানে রয়েছে তাঁদের প্রতিষ্ঠিত শ্রীরাধাগোবিন্দের মন্দিরও।

মহাকালের স্রোত লোকজীবনের অনেক সংস্কৃতিকে কেড়ে নিচ্ছে দিনদিন, এবং কেড়ে নিচ্ছে আমাদের সুপ্রাচীন ঐতিহ্যকেও। কিন্তু কেড়ে নিতে পারেনি কুমারখালী-কুষ্টিয়ার ‘কাঙালের’ রেখে যাওয়া সেই অমর সৃষ্টিকে, যাকে কন্ঠে ধারণ করে মহাসিন্ধু পারাপারের কাণ্ডারীর শ্রীপাদপদ্মে প্রার্থনা করে চলেছেন তীরে অপেক্ষারত বোষ্টম-বোষ্টমি কিংবা বানপ্রস্থের প্রবীণরা। তাই বাংলার পূর্বতম প্রান্তের লোকায়ত পরিসরের ভাবপ্রবন জনমানসে আজও শোনা যায় খঞ্জনি-মন্দিরার তালে তালে সুললিত-সুমধুর সুরে ধ্বনিত হচ্ছে —

“হরি দিন ত গেল, সন্ধ্যা হ’ল পার কর আমারে —-।”

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!