The Mirrow

কবিতা দিবসের ভাবনা

Share the Article

কৃষ্ণা মিশ্র ভট্টাচার্য

কবিতার জন‍্য নুড়ি বিছানো পথ, কবিতার জন‍্য লাল গোলাপ স্বাধীনতা, কবিতার জন্য কফির কাপে আড্ডা তুমুল,কবিতার জন্য ভালোবাসার আতর মাখা রুমাল, কবিতার জন‍্য মিছিল,কবিতার জন‍্য একসাগর হল্লাবোল, এবং কবিতার জন্য এক আকাশ নীলাভ ভালোবাসা।

বিখ্যাত আমেরিকান কবি ও সমালোচক ডানা জোইয়ার-এর মতে,”পোয়েট্রি ইজ আ্যন আর্ট লাইক পেইন্টিং অর্ জাজ্ অপেরা অর্ ড্রামা।” কবিতার প্রধান এবং অন‍্যতম আকর্ষণ আনন্দ। এবং আনন্দ। আনন্দের অন্তর্নিহিত গোপন সন্দর্ভেই সম্পৃক্ত হয়ে থাকে কখনো অধিচেতনা, অতিচেতনা, সামাজিক চেতনা এবং যুগপরিবর্তনের বিপ্লবের বীজ।

বিখ্যাত কবি বোঁদলেয়ার একজায়গায় বলেছেন–“আ্যনি হেলদি ম‍্যান ক‍্যান গো উইদাউট্ ফুড ফর্ টু ডেস্ বাট নট্ উইদাউট্ পোয়েট্রি।”

পৃথিবী জোড়া কবিরা–হোমার,ভার্জিল,দান্তে, বাল্মীকি, বেদব‍্যাস, কালিদাস, গ‍্যায়টে, সফোক্লিস, চসার, শেকসপিয়ার, মিলটন, বায়রন, শেলি, কিটস্ ওয়ার্ডসওয়ার্থ, মধুসূদন, রবীন্দ্রনাথ, ব্রাউনিং , এলিয়ট, এজরা পাউন্ড, ইয়েটস, নেরুদা, লোরকা, নাজিম হিকমত, বোঁদলেয়ার–এঁরা কবিতাকে এক ঐশ্বরীয় দর্শন, এক জীবনবেদে পরিণত করেছেন। মানুষের সৃষ্টিকে প্রকৃতি এবং  ঈশ্বরের সৃষ্টির পাশে দাঁড় করিয়ে দিয়েছেন।

বিগত শতাব্দীর শেষ ভাগ থেকেই কবিতার জনপ্রিয়তা হয়তো কমতে শুরু করেছিল–ডানা জোইয়া তাঁর ‘ক‍্যান পোয়েট্রি ম‍্যাটার’ প্রবন্ধে বলেছেন যে আমেরিকায় পোয়েট্রি এখন সাব কালচার বা উপ-সংস্কৃতিতে পরিণত।

      হয়তো পৃথিবীর সব দেশেই কবিতার জনপ্রিয়তা ধীরে ধীরে কমতে শুরু করেছে; ইন্টারনেট, টেলিভিশন ইত্যাদির সঙ্গে প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়ছে কবিতা। কিন্তু কবিতার স্থান অন‍্য কোনও আর্ট মাধ‍্যমের নেবার ক্ষমতাই নেই।

বিশ্ব কবিতা দিবসের প্রেক্ষাপট :

       ১৯৯৯ সালে ফরাসি দেশের রাজধানী প‍্যারি শহরে অনুষ্ঠিত ইউনেস্কোর  ৩০ তম অধিবেশনে ২১ শে মার্চ দিনটিকে –‘World Poetry Day’ বা ‘বিশ্ব কবিতা দিবস’ হিসেবে ঘোষণা করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সেখানে ইউনেস্কোর ঘোষণাপত্রে বলা হয়–“The purpose of the day is to promote the reading, writing, publishing and teaching poetry throughout the world. It’s purpose is to give fresh recognition and impetus to national and international poetry movement.”  এ প্রসঙ্গে আরও বলা হয়েছে যে পৃথিবীতে প্রথম কবিতা মুখে মুখে বলা হত, অনেকটা কথকতার মাধ্যমে। সেই পুরানো ট্র‍্যাডিশনকে যাতে আবার ফিরিয়ে আনা যায় তার উপরেও জোর দেওয়া হবে। কবিতার সঙ্গে সঙ্গে অন‍্যান‍্য আর্ট ফর্ম–যেমন থিয়েটার, নাট‍্যকাব‍্য, অন‍্যান‍্য দেশজ ফর্ম–যেমন আমাদের যাত্রাপালা, ভাওনা, তামাশা, নৌটঙ্কি, গম্ভীরা –এগুলোর মাধ্যমে কবিতাকে সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছে দেবার ওপরও জোর দেওয়া হয়।তাছাড়া ছোট ছোট প্রকাশক সংস্থাকে সাপোর্ট দেওয়া , মিডিয়াতে কবিতার ইমেজকে আবার ফিরিয়ে আনা–যাতে কবিতা একটি উপ-সংস্কৃতিতে পরিণত না হয়ে প্রধান শিল্প মাধ্যম হয়ে উঠে এবং নিজস্ব পরিচিতি নিয়ে বেঁচে থাকতে পারে, সেদিকে নজর দেওয়াও বিশ্ব কবিতা দিবসের একটি বিশেষ উদ্দেশ্য।

কথা শেষ

       বিশ শতকের গোড়ার দিকে রোমান মহাকবি ভার্জিলের জন্মদিন ১৮ ই অক্টোবর বিশ্ব কবিতা দিবস রূপে পালিত হত।ইউনেস্কোর ঘোষণার পর ২১ শে মার্চ দিনটিতে কবিতাপ্রেমীরা কবিতা উৎসবে মেতে উঠেন।দিল্লিতে আমাদের ‘দিল্লি হাটার্স’ কবিগোষ্ঠী সহ আরও বিভিন্ন সংস্থা এই দিনটিকে ঘিরে উৎসব করেন। কবিতা মানুষের বেঁচে থাকার উৎসমুখ। কবিতা বিশ্ব সহ ভারতবর্ষের প্রতিটি অঞ্চলে একটি প্রধান সংস্কৃতি হয়ে উঠুক।

        শেষ করছি মার্ক স্ট্রান্ড এর অসাধারণ কবিতার লাইন দিয়ে—

“Ink runs from the corner of my mouth

There is no happiness like mine

I am eating poetry”

( কৃষ্ণা মিশ্র ভট্টাচার্য দিল্লিপ্রবাসী বরাক সন্তান। প্রতিষ্ঠিত কবি, গল্পকার ও লিটল ম্যাগাজিন সম্পাদক। )

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!