আশিস চৌধুরী // ২২-০৯-২০২১
এআইইউডিএফ এর সঙ্গে জোট রাখবে না ভাঙবে এ নিয়ে জল্পনা-কল্পনার খুব জোরালো হয়ে উঠার আগেই মূলত রাজ্যের কংগ্রেস নেতৃত্ব এআইইউডিএফ -এর সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করার কথা ঘোষণা করে দিয়েছে। ‘মূলত রাজ্য নেতৃত্ব’ কথাটা এইজন্য বললাম কারণ এই সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে কংগ্রেসের সাংগঠনিক কাঠামোর ধরাছোঁয়ার ঊর্ধে থাকা তথাকথিত হাইকমান্ড নামক আজব বস্তুটির কী ভূমিকা তা কিন্তু এখনও স্পষ্ট নয়। মহাজোট থেকে বদরুদ্দিন আজমলের দলকে নিষ্কৃতি দেওয়ার ব্যাপারে অন্যান্য শরিক দলের কী অবস্থান তাও স্পষ্ট নয়। বিপিএফ অবশ্য ইতিমধ্যে মহাজোট ত্যাগের বাসনা প্রকাশ করেছে। রইল বাকি সিপিআইএম যে দলের রাজ্যে মাত্র একজন বিধানসভা সদস্য রয়েছে। জোট থেকে এআইইউডিএফ-কে বের করে দেওয়ার ব্যাপারে কংগ্রেসের রাজ্য নেতৃত্বকেই মুখ্য ভূমিকায় দেখা গেছে। অন্যদিকে আজমল সাহেবের নিজের কোন প্রতিক্রিয়া কিন্তু এরকম একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনার ব্যাপারে এ-যাবৎ আমরা পাইনি। দলের দ্বিতীয় সারির নেতৃত্ব এক্ষেত্রে গতানুগতিক প্রতিক্রিয়া দিয়েছেন মাত্র।
এআইইউডিএফ দলের প্রতিষ্ঠা লগ্ন থেকেই কংগ্রেসের সঙ্গে এই দলটি সম্পর্কের একটা টানাপোড়েন রয়েছে। দিল্লিতে আজমল সাহের ইউপিএ-র অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ, আবার রাজ্য রাজনীতিতে কংগ্রেসের সঙ্গে এই আছি এই নেই। কংগ্রেসের রাজ্য নেতৃত্ব বিশেষ করে তরুণ গগৈ এই দলের সঙ্গে মিতালির একেবারে বিরুদ্ধে ছিলেন।
২০০৬ সালের নির্বাচনে কংগ্রেসের ক্ষমতায় প্রত্যাবর্তন। সেই সময় উজান আসামে অগপ আর নিম্ন আসামে এআইইউডিএফ এর গুরুতর চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছিল কংগ্রেস । তখন ‘হু ইজ বদরুদ্দিন’ এই একটিমাত্র শ্লোগানকে সম্বল করে তরুণ গগৈ উজান আসামে বাজিমাৎ করে কংগ্রেসের ক্ষমতা ধরে রাখা সুনিশ্চিত করেছিলেন। পনেরো বছর পর তরুণ গগৈর এককালের মানসপুত্র হিমন্ত বিশ্ব শর্মা প্রায় অনুরূপ কৌশল অবলম্বন করে লুঙ্গি-দাড়ির ক্ষমতা দখলের ভয় দেখিয়ে উজান আসামে কংগ্রেসকে কোণঠাসা করে বিজেপির একচেটিয়া জয় সুনিশ্চিত করেন।
আসলে একেবারে সাধারণ অঙ্কেও কংগ্রেস ও এআইইউডিএফ দলের জোট করে আর আলাদা হয়ে নির্বাচন লড়ার মধ্যে এআইইউডিএফ দলের লাভালাভের বিশেষ পার্থক্য নেই। ২০০৬, ২০১১, ২০১৬ আর সর্বশেষ ২০২১ এই চারটি নির্বাচনে এই দলের আসন প্রাপ্তির সংখ্যা দেখলেই এটা স্পষ্ট দেখা যায়। দেখা গেছে এই আসন সংখ্যা ১৩ থেকে ১৭-র মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকছে। আর, কংগ্রেস এই মিতালি করে ধর্মীয় সংখ্যালঘু জনবহুল আসনগুলোতে কিছুটা লাভবান হয়তো হয়েছে কিন্তু বিজেপির ধর্মীয় মেরুকরণের ঠেলায় প্রান্তিক ও হিন্দু সংখ্যাগরিষ্ঠ অঞ্চলে প্রায় অস্তিত্ব হারানোর সংকটে পড়ে। অসমিয়া হিন্দু, বাঙালি হিন্দু দুটি ক্ষেত্রেই এই বাস্তবতা প্রযোজ্য। পুরো উজান আসামে অসমিয়া জাতি জনজাতি অধ্যুষিত আসনগুলো, মধ্য আসামের হোজাই-লামডিংয়ের মত বাঙালি হিন্দু প্রধান আসন কিংবা বরাক উপত্যকার বাঙালি হিন্দুপ্রধান আসনগুলোই হোক – ধর্মীয় মেরুকরণের প্রাবল্য কংগ্রসকে একেবারে কোণঠাসা করে দিয়েছে। অন্যান্য ধর্মীয় এজেণ্ডার পাশাপাশি এআইইউডিএফ এর সঙ্গে কংগ্রসের মিত্রতা বিজেপির মেরুকরণের রাজনীতিতে বিশেষ সহায়ক হয়েছে – এইকথা স্বীকার করতেই হবে।
এই আলোচনায় কংগ্রেস ও আজমল সাহেবের দলের জোট বা জোট নয় এই দুই সম্পর্কে পারস্পরিক লাভ ক্ষতির দিকটা উল্লেখ করা গেল। পরবর্তী অংশে এই দুই দলের রাজনৈতিক সম্পর্কের জনভিত্তিমূলক আলোচনার প্রয়াস করা হবে।
(এই নিবন্ধে প্রকাশিত মতামত সম্পূর্ণ লেখকের।)