The Mirrow

“মা, জ্ঞান দাও, ভক্তি দাও, বিবেক দাও, বৈরাগ্য দাও”

Share the Article

সময়টা উনিশ শতকের শেষবেলা। নরেন্দ্রনাথ দত্ত তখন এফ-এ পরীক্ষার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। সেই সময় পিতা বিস্বনাথ দত্তের মৃত্যু হয়। প্রচন্ড আর্থিক অনটনে পড়ে যায় দত্ত পরিবার। পরিবারের বড় ছেলে হিসেবে সংসার প্রতিপালনের দায়িত্ব এসে পড়ে নরেন্দ্রনাথ দত্তের উপর। চরম দুর্দশা থেকে কাটিয়ে উঠতে তিনি চাকরির খোঁজে হন্নে হয়ে ঘুরতে থাকেন। বিধি বাম, সুরাহা হচ্ছিল না। মানসিক অবসাদকে হাল্কা করতে দক্ষিণেশ্বরে ঠাকুর রামকৃষ্ণের শরণে তিনি নিজেকে সঁপে দেন। সেই সময়টাতে তিনি ঠাকুরকে তাঁর জন্য মা কালীর নিকট প্রার্থনা করার অনুরোধ করতেন। ঠাকুর যেমন ছিলেন মা কালীর ভক্ত, বিবেকানন্দ আবার সেই সময় মূর্তিপুজাতে বিশ্বাস করতেন না। ঠাকুর সেটা জানতেন এবং ‘নরেনকে’ মায়ের কাছে প্রার্থনা করার উপদেশ দিতেন। বলতেন, “তোর কষ্ট, তুই গিয়ে মায়ের কাছে বল। মা জগজ্জননী, তিনি সবার দুঃখ-দুর্দশা দূর করেন, তিনি মুখ ফিরিয়ে নেন না। দেখে নে একটিবার।”

ঠাকুরের অনুপ্রেরণায় ‘নরেন’ কালীঘাটে মায়ের কাছে নিজেকে সমর্পণ করলেন। ফিরে আসলে ঠাকুর জিজ্ঞেস করেন, “কি চাইলি মায়ের কাছে?”  নরেন বললেন, “সব যেন উল্টো-পাল্টা হয়ে গেল মায়ের মুখ দেখে। অর্থ, চাকরি কিছুই চাইতে পারলাম না। মায়ের কাছে  জ্ঞান, ভক্তি, বিবেক, বৈরাগ্য চাইলাম।” ঠাকুর বললেন, “সে কি রে! যা যা, আবার যা। গিয়ে মাকে বল – চাকরি দাও, অর্থ দাও। যা।” নরেন আবার গেলেন, কিন্তু মায়ের মুখ দেখে সকল সাংসারিক দুঃখ, ক্লেশ হারিয়ে গেল যেন তাঁর মন থেকে, চোখের সামনে যেন ভাসতে থাকল চৈতন্যময়ী মায়ের চরাচর ব্যাপ্তি। আবারও তিনি প্রার্থনা করলেন –  “মা, জ্ঞান দাও, ভক্তি দাও, বিবেক দাও, বৈরাগ্য দাও।” তৃতীয়বার ঠাকুর নরেনকে মায়ের কাছে পাঠানোর পরও বারবার প্রণাম করতে করতে সেই একই কথা নরেনের মন থেকে বেরিয়ে আসল।

ফিরে এসে মাথা নত করে ঠাকুরকে সেই কথা বলতে, ঠাকুর তাঁর মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বললেন, “তোর কথা শুনবেন মা, জাগতিক দুঃখ-ক্লেশ থেকে মুক্তি দেবেন তোকে। তোর ভাত-কাপড়ের অভাব হবেনা।”

মূর্তি পূজায় যার বিশ্বাস ছিল না সেই বিবেকানন্দকে মানতে হয়েছিল মা কালীকে, বিশ্বাস করতে হয়েছিল নারীরূপা সেই মহাশক্তিতে। পরবর্তীকালে মা কালীর একনিষ্ট ভক্ত হয়েছিলেন স্বামী বিবেকানন্দ। আদ্যাশক্তির সাধনায় নিজেকে নিয়োজিত করতে পেরেছিলেন। ঠাকুরের কাছে শিখেছিলেন মা-কালীর গান। নিজে লিখেছিলেন সেই বিখ্যাত কবিতা – KALI THE MOTHER। স্বামী বিবেকানন্দ এই কবিতাটি রচনা করেন ১৮৯৮ সালে যখন তিনি কাশ্মীরের ডাল লেকে একটি হাউসবোটে দিন কাটাচ্ছিলেন। কবিতাটির মধ্য দিয়ে তিনি মা কালীর ভয়ঙ্করী রূপকে পূজা করেছিলেন। এর বাংলায় অনুবাদ করেছিলেন কবি সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত (মৃত্যুরূপা মাতা)। ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের সময়টাতে নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসু ও ঋষি অরবিন্দ ঘোষ এই কবিতাটি দ্বারা বিশেষভাবে অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন।

Kali the Mother

Swami Vivekananda

The stars are blotted out,
The clouds are covering clouds,
It is darkness vibrant, sonant.
In the roaring, whirling wind
Are the souls of a million lunatics
Just loose from the prison-house,
Wrenching trees by the roots,
Sweeping all from the path.
The sea has joined the fray,
And swirls up mountain-waves,
To reach the pitchy sky.
The flash of lurid light
Reveals on every side
A thousand, thousand shades
Of Death begrimed and black —
Scattering plagues and sorrows,
Dancing mad with joy,
Come, Mother, come!
For Terror is Thy name,
Death is in Thy breath,
And every shaking step
Destroys a world for e’er.
Thou “Time”, the All-Destroyer!
Come, O Mother, come!
Who dares misery love,
And hug the form of Death,
Dance in Destruction’s dance,
To him the Mother comes.

(Complete Works of Swami Vivekananda, Volume 4.)

মৃত্যুরূপা মাতা

-সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত

নিঃশেষে নিভেছে তারাদল, মেঘ এসে আবরিছে মেঘ,

স্পন্দিত ধ্বণিত অন্ধকার, গরজিছে ঘূর্ণ-বায়ুবেগ!

লক্ষ লক্ষ উন্মাদ পরাণ, বহির্গত বন্দিশালা হ’তে,

মহাবৃক্ষ সমূলে উপাড়ি’ ফুৎ কারে উড়ায়ে চলে পথে!

সমুদ্র সংগ্রামে দিল হানা, উঠে ঢেউ গিরিচূড়া জিনি’

নভস্থলে পড়শিতে চায়! ঘোররূপা হাসিছে দামিনী,

প্রকাশিছে দিকে দিকে তার মৃত্যুর কালিমা মাখা গায়!

লক্ষ লক্ষ ছায়ার শরীর! দুঃখরাশি জগতে ছড়ায়,

নাচে তারা উন্মাদ তান্ডবে; মৃত্যুরূপা মা আমার আয়!

করালি! করাল তোর নাম, মৃত্যু তোর নিঃশ্বাসে প্রশ্বাসে

তোর ভীম চরণ-নিক্ষেপ প্রতিপদে ব্রহ্মান্ড বিনাশে!

কালী, তুই প্রলয়রূপিণী, আয় মা গো আয় মোর পাশে।

সাহসে যে দুঃখ দৈন্য চায়, মৃত্যুরে যে বাঁধে বাহুপাশে,

কাল-নৃত্য করে উপভোগ, মাতৃরূপা তারি কাছে আসে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!