The Mirrow

এখানে বিদ্যাসাগরের প্রয়োজন নেই

Share the Article

মানবদেহ ক্ষণস্থায়ী, যত মজবুতই হোক না কেন একটা সময় পরে সে অস্তিত্ব হারায়। থেকে যায় আদর্শ, সে চিরস্থায়ী। ব্যক্তির বর্তমানে ও অবর্তমানে এই আদর্শই তাঁর প্রতি অন্যদের আকৃষ্ট করে রাখে। ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের ক্ষেত্রেও কথাটির অন্যথা হয় না। বাংলা তথা ভারতভূমিতে এরকম দৃঢচেতা, আপোষহীন, সংবেদনশীল, কর্মঠ মানুষ দ্বিতীয়টি পাওয়া কষ্ট। প্রাবন্ধিক রামেন্দ্র সুন্দর ত্রিবেদীর বিদ্যাসাগর সম্পর্কিত একটি কথা এখানে বিশেষ উল্লেখযোগ্য, “আমাদের দেশে যারা খুব বড়ো বলে পরিচিত ও পরিগনিত, তাঁদের সামনে বিদ্যাসাগরের জীবন চরিত ধরা মাত্র তাঁরা নেহাৎ ক্ষুদ্র হয়ে পড়েন এবং আমাদের গর্বেত ‘বাঙালীত্ব’ নিতান্ত ক্ষুদ্র ও শীর্ণ কলেরব ধারণ করে। “


বরাক উপত্যকাকে বলা হয় বাঙালীর তৃতীয় ঘর। কেন বলা হয় সেটা অবশ্য আজকে দাঁড়িয়ে রীতিমতো গবেষণার বিষয়। পদে পদে আপোষ করে চলা, প্রতিবাদহীন, সংকীর্ণ, ইতিহাস বিস্মৃত এই মানুষগুলো আর যাই হোক না কেন ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের মধ্যে যে বাঙালীসত্ত্বার দেখা মেলে তার উত্তরসুরী হতে পারে না। রাজনৈতিক, সামাজিক সবদিক থেকেই পিছিয়ে থাকা এই মানুষগুলো এই মানুষগুলোর মধ্যে প্রতিবাদীসত্ত্বা যে কবেই মরে গেছে তা সে নিজেও কোনোদিন জানতে, বুঝতে পারেনি। তাঁর ভাষা, তাঁর জাতীয় পরিচয়, তাঁর অধিকারের ওপরের ওপর এতবার কুঠারাঘাত হয়েছে যে সেই কুঠার পর্যন্ত ক্লান্ত হিয়ে গেছে, এই মানুষগুলো কিন্তু প্রতিবাদহীনই রয়ে গেছে। এখানে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর পাঠ্যপুস্তকে পাঠ্য , জনমনে শ্রদ্ধেয় কিন্তু জনজীবনে অপাঙতেয়। তাঁর হিমালয়সম দৃঢ ব্যক্তিত্বের সঙ্গে এখানে ‘কোনোরকম বেঁচে থাকা’ মানুষের কোনো মিল নেই বলেই এখানের বাঙালীর জীবন পথে বিদ্যাসাগরের প্রয়োজন নেই।


সারাজীবন মানুষ ও সমাজের হিতার্থে সমাজপতিদের সঙ্গে লড়ে গেছেন। মানুষকে শিক্ষিত করতে, মহিলাদের সমাজে যোগ্য সম্মান এনে দিতে প্রাণপাত পরিশ্রম করেছেন। কিন্তু আপোষ করেননি। জানতেন এই দেশে ব্রিটিশ দখলদার, সমাজে হিতে তাদের সাহায্য নিয়েছেন কিন্তু কোনো ব্রিটিশদের তাবেদার হয়ে যাননি। সময়ে সময়ে সেই ঔপনিবেশিকদের পর্যন্ত নাকানিচুাবানী খাইয়েছেন। আর এখানে, জনপ্রতিনিধিরা আপোষ করেন গদির লোভে, বুদ্ধিজীবীরা আপোষ করেন সরকারী সম্মানের লোভে আর মানুষ আপোষ নিজেদের চারিত্রিক দুর্বলতায়। আপোষই যেখানে একটি সমাজের পরিচয় হয়ে দাঁড়ায় সেখানে আপোষহীন এই মানুষটার কি দরকার। এখানে বিদ্যাসাগরের প্রয়োজন নেই।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!